হাসামদিয়া গণহত্যা: শহীদদের যোগ্য মর্যাদা দাবি

ফরিদপুরে হাসামদিয়া গণহত্যা দিবসে শহীদদের স্বরণ করেছেন এলাকাবাসী ও শহীদ পরিবারের লোকজন।

ফরিদপুর প্রতিনিধিমফিজুর রহমান শিপন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2018, 03:07 PM
Updated : 16 May 2018, 03:08 PM

দিনটি পালন উপলক্ষে বুধবার হাসামদিয়া শাহ জাফর টেকনিক্যাল কলেজে স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় বক্তারা ১৯৭১ সালে হাসামদিয়ায় পাক হানাদারদের হামলায় নিহতদেরকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানান।    

১৯৭১ সালের ১৬ মে বোয়ালমারী উপজেলার হাসামদিয়ায় ৩৩ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয় এবং হাসামদিয়া বাজারসহ গ্রামের শতাধিক বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

শাহ খুররম রুহুল কুমারের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব।

রব বলেন, এই দেশে যখন যে ক্ষমতায় আসে তখন সে তার মতো করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তৈরি করে। একদিন দেশে প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখা হবে। সেদিন অনেক কিছুই বেরিয়ে আসবে।

সরকার উন্নয়নের নামে দেশকে বিদেশিদের কাছে ঋণগ্রস্ত করছে এবং দেশের প্রত্যেক নাগরিক লাখ লাখ টাকার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

উন্নায়ন আর গণতন্ত্রকে এক করা যাবে না উল্লেখ করে রব বলেন, “দেশে আজ বিরোধী শিবিরের লোকজন কথা বলতে পারে না। এটা কোনোভাবেই গণতন্ত্র হতে পারে না।”

পৃথিবীর অনেক স্বৈরশাসকের পতন বাজেভাবে হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখনও সময় আছে মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিন।

তিনি বর্তমান সরকারকে ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণেরও পরামর্শ দেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে ফরিদপুর অঞ্চলের সাব-সেক্টর কমান্ডার নূর মো. বাবুল, মুজিব বাহিনীর কমান্ডার শাহ মো. আবু জাফর, বোয়ালমারীর যুদ্ধকালীন কমান্ডার নওয়াব উদ্দিন আহমেদ টোকন প্রমুখ।

অনুষ্ঠান শেষে শহীদ পরিবারের মাঝে বস্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখা বই  তুলেন দেন অতিথিরা।

সভায় বক্তরা এই গণহত্যায় শহীদ পরিবারের সদস্যসহ দেশের সকল গণহত্যায় নিহতের শহীদের মর্যাদা দেওয়ার আহবান জানান। 

শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি

স্বাধীনতা ৪৭ বছর পরও সেখানে সরকারি উদ্যোগে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়নি। স্বীকৃতি পায়নি শহীদ পরিবারগুলো। 

ফরিদপুরের তৎকালীন মুজিব বাহিনীর কমান্ডার সাবেক এমপি শাহ মো. আবু জাফর  বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ মে ভোরে যশোর সেনানিবাস থেকে মেজর নেওয়াজের নেতৃত্বে তিন শতাধিক পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ঢুকে পড়ে হাসামদিয়া গ্রামে। সেইদিন আমাকে হত্যা করতে এসে না পেয়ে তারা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে গ্রামে প্রবেশ করে। শুরু করে নির্বিচারে গণহত্যা, অগ্নি সংযোগ, লুটপাট, নারী ধর্ষণ।

তিনি বলেন, স্থানীয় রাজাকার আলবদরদের সহায়তায় হানাদার বাহিনী হাসামদিয়া বাজার পুড়িয়ে দেয়। এরপর তারা হিন্দু অধ্যুষিত রাজাপুর রামনগর গ্রামে ঢুকে অর্ধশত নারী ধর্ষণ করে এবং এ সময় ওই এলাকার ৩৩ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে কুমার নদের পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এভাবে তারা আশপাশে আরও ৫টি গ্রামে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। 

আবু জাফর বলেন, এই গণহত্যায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা আজও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও স্বীকৃতি পায়নি। আমরা ব্যক্তি উদ্যোগে দিবসটি পালন করলেও সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না।

“বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকাবস্থায় তিনি দুই হাজার করে টাকা দিয়েছিলেন, তার মৃত্যুর পর আর কেউ খোঁজ নেয়নি এদের।”