খাগড়াছড়িতে হেডম্যান-কারবারী সম্প্রীতি সম্মেলন

পার্বত্য এলাকায় চলমান সহিংসতার প্রেক্ষাপটে খাগড়াছড়িতে অনুষ্ঠিত হলো হেডম্যান-কারবারী সম্প্রীতি সম্মেলন।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2018, 01:49 PM
Updated : 12 May 2018, 01:53 PM

‘গোষ্ঠী-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশ গড়ি, সম্প্রীতির খাগড়াছড়ি’ শ্লোগানে শনিবার জেলা শহরের টাউন হলে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের উদ্যোগে এবং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সহযোগিতায় এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সম্মেলনে পাহাড়িদের তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃত্বদানকারী ৫৯৮ জন হেডম্যান ও ৪৫ জন কারবারী যোগ দেন।

হেডম্যান-কারবারীরা পাহাড়ের বর্তমান পরিস্থিতিতে এ সম্মেলনকে উপযোগী আখ্যায়িত করে কয়েকটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরে প্রতিকারের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার আলী আহমেদ খান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম অরক্ষিত, অনিয়ন্ত্রিত। সাধারণ পাহাড়িরা ভালো নেই। আপনারা যারা এখানে এসেছেন চেহারা দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। কারণ আমি নিজেও একজন পাহাড়ি।”

তিনি পাহাড়ে কোনো ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত হচ্ছে না দাবি করে বলেন, যা হচ্ছে তা এলাকা নিয়ন্ত্রণে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। কে কোন এলাকা দখল করে চাঁদাবাজি করবে এ লড়াই চলছে। এ অরাজকতা আর চলতে দেওয়া যায় না।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, “পাহাড়ে একটি অশুভ শক্তি সাধারণ পাহাড়িদের উপর অবৈধ শাসন চালাচ্ছে। আগে পাহাড়ে সকলের দিন সুন্দর ছিল, সবাই সুন্দর দিন কাটাত। এখন পাহাড়ে জুলুম অভিশাপ চলছে।”

‘পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতি নয় সন্ত্রাসঘাতি’ চলছে  অভিযোগ করে বলেন, “সাধারণ পাহাড়িদের মাথার উপর লবণ রেখে বরই খাচ্ছে। জুম চাষ থেকে শুরু করে গরু ছাগল, হাঁস-মুরগি থেকে পর্যন্ত চাঁদা খাচ্ছে।”

তিনি সাধারণ পাহাড়িদের সন্ত্রাসীদের রুখে দেওয়ার আহবান জানান এবং নিরাপত্তা বাহিনী তাদের পাশে আছে বলে আশ্বস্ত করেন।

কংজরী চৌধুরী বলেন, “আমরা যদি উগ্র পাহাড়ি জাতীয়বাদ ও উগ্র বাঙালি জাতীয়বাদ বর্জন না করি এ অঞ্চলে কখনও সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি বজায় রাখা যাবে না।”

কারবারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রণিক ত্রিপুরা এ সম্প্রীতি সম্মেলনের মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি-সম্প্রীতি ফিরে আসবে বলে আশা করেন।

হেডম্যান ডিকু তালুকদার বলেন, কারা এলাকায় চাঁদাবাজি করছে, সন্ত্রাস করছে সবারই জানা আছে। এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

সম্প্রতি পাহাড়িদের সশস্ত্র গ্রুপগুলোর আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে একজন উপজেলা চেয়ারম্যান ও একটি আঞ্চলিক সংগঠনের প্রধানসহ অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছেন।

জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলাম এ অঞ্চলে শান্তি স্থাপনে তৃণমূল পাহাড়ি নেতাদের সহযোগিতা চান।

পুলিশ সুপার আলী আহমেদ খান কমিউনিটি পুলিশকে সন্ত্রাসী ও সমাজ বিরোধীদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য পাহাড়িদের আহ্বান জানান।