অমিত হত্যার তদন্তে ‘ঢিলেমির’ অভিযোগ পিবিআইয়ের বিরুদ্ধে

গোপালগঞ্জ সদরের বৌলতলী গ্রামের দিনমজুরের ছেলে অমিত বিশ্বাস হতাকাণ্ডের তদন্ত দুই বছরেও শেষ করতে পারেনি পুলিশ।

মনোজ সাহা গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2018, 12:05 PM
Updated : 11 May 2018, 12:05 PM

প্রতিবেশীর মেয়ের সঙ্গে প্রেমের কারণে দুই পুরিবারের বিরোধের জেরে এ হত্যকাণ্ড হয়েছে বলে অমিত বিশ্বাসের স্বজনদের অভিযোগ।

২০১৬ সালের ২৯ এপ্রিল বৌলতলী ইউনিয়নের বৌলতলী গ্রামে বাড়ির পাশে একটি গাছে অমৃত বিশ্বাসের ছেলে অমিতের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় অমিতের মা যুথিকা বিশ্বাস গোপালগঞ্জ আদালতে হত্যা মামলা করেছেন। মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

মামলায় অভিযোগ করা হয়, অমিত বিশ্বাসের সঙ্গে প্রতিবেশী দুলাল বিশ্বাসের মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এটি দুলাল বিশ্বাস মেনে নিতে না পারায় আমিতকে তাদের বাড়ি যেতে নিষেধ করেন। এর ব্যতিক্রম হলে অমিতকে খুন করার হুমকি দেয় তারা।

গত ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল রাতে দুলাল বিশ্বাস ও তার লোকজন অমিতকে ধরে নিয়ে হত্যা করে বাড়ির পাশের একটি গাছে ঝুলিয়ে রাখেন বলে মামলায় অভিযৈাগ করা হয়।

মামলার বাদী ও অমিতের মা যুথিকা বলেন, “হত্যাকারীরা এটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে এবং থানায় ইউডি মামলা রেকর্ড করে। থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে বৌলতলী ইউপি চেয়ারম্যান সুকান্ত বিশ্বাস এ ঘটনা ধামাচাপা দেন।”

তিনি বলেন, এরপর তিনি দুলাল বিশ্বাস, মৃনাল বিশ্বাস, নিভা বিশ্বাস এবং ইউপি চেয়ারম্যান সুকান্ত বিশ্বাসসহ ১১ জনকে আসামি করে গোপালগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারকি হাকিম আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

“আদালত মামলাটি তদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেয়। পিবিআই আসামি অঞ্জন বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করে। অঞ্জন বিশ্বাস ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।”

মামলা করার কারণে ইউপি চেয়ারম্যান সুকান্ত বিশ্বাস, প্রতিবেশী দুলাল বিশ্বাস, মৃনাল বিশ্বাস, নিভা বিশ্বাস বাদীর আরও তিন সন্তানকে হত্যার হুমকি দিয়ে বাড়ি ছাড়া করেছেন বলে যুথিকা বিশ্বাসের অভিযোগ।

এরপর থেকে স্বামী, এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে তালতলা গ্রামে বাবার বাড়িতে বসবাস করছেন জানিয়ে যুথিকা বলেন, “আমি ও আমার স্বামী দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালাই। তিন ছেলে-মেয়ে স্কুলে পড়ছে। দিন মজুরের কাজ করে যা পাই তা দিয়ে সংসারই চলে না। তারপর প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ছেলে হত্যার মামলা চালাতে গিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।

“প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটিয়ে এ মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করছে। পিবিআই মামলার তদন্তে ঢিলেমি করছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।”

গোপালগঞ্জ পিবিআইয়ের এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. অরিফুর রহমান ফারাজী বলেন, “মমলা ইতিমধ্যে ডিটেক্ট করা হয়েছে। আসামি অঞ্জন হত্যাকাণ্ডটি তার চোখের সামনে হতে দেখেছে বলে গত বছরের ১৬ মে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সেখানে সে হত্যাকারীদের নামও বলেছে। আমি এ মামলার অগ্রগতির জন্য কাজ করে যাচ্ছি।”

বৌলতলী ইউপি চেয়ারম্যান সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, অমিত দিন মজুরের সন্তান। তার দামী মেবাইলের প্রতি ঝোক ছিল। এ জন্য সে মামাবাড়ি থেকে টাকা চুরি করে। এ নিয়ে সে তিন দিন বাড়িতে খায়নি। এছাড়া প্রতিবেশীর মেয়ের একটি অন্তর্বাস সে চুরি করায় মেয়েটির বাবা দুলাল বিশ্বাস আমিতের বাবা অমৃত বিশ্বাসের কাছে নালিশ করে।

“এসব বিষয় নিয়ে অমিতের বাবা তাকে ঘটনার দিন রাতে বকাঝকা করে। পরদিন সকালে বাড়ির পাশের একটি গাছে অমিতের লাশ ঝুলতে দেখা যায়। এ সময় আমি ঢাকা অবস্থান করছিলাম। বৌলতলীতে ছিলাম না। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে অমিত আত্মহত্যা করেছে বলে উল্লেখ করা হয়। পরে সিআইডি এ মমলার ফাইনাল দিয়ে দেয়। এ ঘটনার কয়েকদিন পর আমাদের হয়রানি করতে যুথিকা বাদী হয়ে আমিসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মমলা করে।”

আগে থেকেই যুথিকা স্বামী-সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি থাকছেন দাবি করে সুকান্ত বরেন, “কেউ তাকে বাড়িছাড়া করেনি। বাড়িছাড়া করার বিষয়টি সত্য নয়। আমরা উল্টো তাকে বাড়ি আসতে বার বার অনুরোধ করেছি।”

গোপালগঞ্জ জেলা পিবিআই পরিদর্শক শংকর চন্দ্র মাতুব্বর বাদীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “অমরা মমলার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এখানে মামলার তুলানায় লোকবল কম রয়েছে। এ জন্য তদন্তে একটু বিলম্ব হচ্ছে। এ মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দ্রুত আমরা আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করতে পারব।”