গাজীপুরে ১৫ মে ভোট করা সম্ভব নয়: সিইসি

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিতের আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের রায় যদি নির্বাচন কমিশনের পক্ষেও যায়, তারপরও তফসিল অনুযায়ী ১৫ মে ওই ভোটের আয়োজন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।

আবুল হোসেন গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2018, 09:56 AM
Updated : 9 May 2018, 01:11 PM

তিনি বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যদি ভোটের জন্য কোনো সময় বেঁধে না দিয়ে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে তারা ভোটের তারিখ পিছিয়ে দেবেন।

“এর জন্য পুনঃতফসিল ঘোষণার প্রয়োজন হবে না, শুধু নির্বাচনের নতুন তারিখ নির্ধারণ করলেই হবে।”

আর সর্বোচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ তুলে দিয়ে তফসিলে নির্ধারিত ১৫ তারিখেই ভোট করতে বললে ইসি তা অনুসরণ করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বুধবার দুপুরে গাজীপুরে জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্থগিত হওয়া ভোট নিয়ে এ কথা বলেন সিইসি নূরুল হুদা।

১৫ মে ভোটের দিন রেখে গত ৩১ মার্চ গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। তারপর ভোটের সব প্রস্তুতিও সারা হয়েছিল; প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের সঙ্গে প্রচারও জমে উঠেছিল।

এর মধ্যেই গত রোববার হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন নিয়ে যান ঢাকার সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজ। শিমুলিয়ার ছয়টি মৌজা গাজীপুর সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজের ওই আবেদনে হাই কোর্ট গত ৬ মে ঢাকার লাগোয়া এই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে দেয়। আদেশের খবর পেয়ে ইসিও গাজীপুরে ভোটের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

ওই নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চে বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

ওই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সিইসি নূরুল হুদা গাজীপুরে সাংবাদিকদের বলেন, “১৫ মে গাজীপুর সিটির ভোট নেয়া সম্ভব নয়। নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আজকেও যদি আদালতের সিদ্ধান্ত হত, তাহলেও নির্ধারিত সময়ে (১৫ মে) নির্বাচন করা সম্ভব হত। আর আদালতের আদেশ যদি আগামীকালও হয়, তাহলেও ভোটের তারিখ পরিবর্তন করতে হবে।”

তবে আদালতের সিদ্ধান্তের ওপরই পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে জানিয়ে সিইসি বলেন, “দেখি কোর্ট কি রকম নির্দেশ দেয়, কোর্ট যদি বলেন যে ১৫ মে ভোট নিতে হবে, তখন আমাদের যেভাবেই হোক কোর্টের আদেশ পালন করতে হবে।

“এখন ক্রিটিক্যাল সময় হয়ে গেছে।… আদালত সময় বেধে না দিয়ে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করলে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেয়া হবে।”

সবকিছু ঠিক থাকলে বুধবার ভোটের আগে সব প্রার্থী ও অংশীজনদের নিয়ে গাজীপুরে মত বিনিময় করার কথা ছিল সিইসির। কিন্তু এ নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যাওয়ায় গাজীপুর সফরে এসে জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।

জেলা প্রশাসকের ভাওয়াল সম্মেলন কক্ষে এই মতবিনিময় সভার আগে নূরুল হুদা জেলা নির্বাচন অফিস পরিদর্শন করেন।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, তারা প্রত্যেকেই মনে করেন যে এ সময়ে নির্বাচন নেওয়া সম্ভব নয়।”

এর ব্যাখ্যায় সিইসি বলেন, ভোটের জন্য প্রায় ১১হাজার পুলিশ সদস্যকে বিভিন্ন জায়গা থেকে এনে গাজীপুরে মোতায়েন করতে হবে এবং পাঁচ থেকে ছয়শ গাড়ি রিকুইজিশন করতে হবে বলে পুলিশ সুপার তাকে জানিয়েছেন। 

তাছাড়া ভোটের দায়িত্ব পাওয়া ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভিন্ন জেলা থেকে আসবেন। সাড়ে আট হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

স্থগিতাদেশের কারণে মাঝখানে অন্তত চারদিন নষ্ট হওয়ায় এখন আর সব প্রস্তুতি শেষ করে ১৫ মে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না বলেই মনে করছেন সিইসি নূরুল হুদা।

ভোট স্থগিত হওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, পরাজয় আঁচ করে সরকারই ‘ষড়যন্ত্র করে’ এ নির্বাচন আটকে দিয়েছে।

আর ওই অভিযোগ অস্বীকার করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, আদালতের ওই সিদ্ধান্তে সরকারের কোনো হাত নেই।

এই জটিলতার পেছনে নির্বাচন কমিশনের কোনো গাফিলতি আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “নির্বাচনের সময় আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিলাম যে সীমানা নিয়ে কোনো জটিলতা আছে কি-না, কোর্টে কোন বিষয় নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে কি-না। তখন তারা পরিষ্কার চিঠি দিয়েছে- কোথাও কোনো বিভেদ নেই, সীমানা নির্ধারণের কোনো সমস্যা নেই।

“তখনই আমরা এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করি। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। স্থানীয় সরকার বিভাগও যেভাবে চিঠি দিয়েছে তাতেও আমি কোনো ভুল দেখি না। তারাতো জেনেশুনে কোর্টের আদেশ বিচার-বিশ্লেষণ করে আমাদের বলেছে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় কোনো সমস্যা নেই।”

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও এরকম কোনো আইনি জটিলতায় পড়তে পারে কি না- এমন প্রশ্নে নূরুল হুদা বলেন, “জাতীয় নির্বাচন মেয়াদের আগের নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হয়। তাই সে নির্বাচন নিয়ে কোনো জটিলতা হবে না।”

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে ওই মতবিনিময় সভায় গাজীপুর নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক কর্মকর্তা রকিব উদ্দন মণ্ডল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাহমুদ হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খন্দকার ইয়াসির আরেফিন, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামান, এনডিসি কুদরত-এ খুদা জুয়েলসহ জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।