চৌদ্দ শিক্ষকের ২০ ছাত্রী, সবাই ফেল

মাগুরায় একটি মাদ্রাসার ২০ ছাত্রী দাখিল পরীক্ষা দিয়ে সবাই ফেল করায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছে; মানববন্ধন করে শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে; অভিযোগ করেছে পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধেও।

মাগুরা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2018, 01:46 PM
Updated : 8 May 2018, 01:46 PM

মহম্মদপুর উপজেলার ঘোষপুর গ্রামে গিয়ে ‘রিজিয়া রুবিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসা’ নামে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে নানা অনিয়মের খবর।

মঙ্গলবার মানববন্ধন চলাকালে আজাদুর রহমান নামে একজন অভিভাবক বলেন, “মাদ্রাসার শিক্ষকরা নিয়মিত মাদ্রাসায় আসেন না। আসলেও ক্লাস না নিয়ে হাজিরা খাতায় সই করে যার যার ব্যক্তিগত কাজে চলে যান।”

কাজী অলিয়ার রহমান নামে এক অভিভাবকও একই অভিযোগ করেন।

তাছাড়া তিনি আরও অভিযোগ করেন, “সভাপতি রুবিয়া খাতুন জাল নিবন্ধন সনদধারী ছেলে আব্দুল ওয়াহাব মিলন, জামাই ও মেয়েসহ ছয় আত্মীয়কে এই মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।

“অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগের কারণে সব শিক্ষার্থী ফেল করেছে। এমপিওভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানটির ১৪ জন শিক্ষক ও তিন কর্মচারী বেতন-ভাতা ভোগ করলেও ছাত্রীদের লেখাপড়া না শিখিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। আবার অনেকে মাদ্রাসার অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজের নামে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। অনেকে মাদ্রাসায় না এসে কোচিং বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।”

মাদ্রাসাটিতে দীর্ঘদিন ধরে অধ্যক্ষের পদ শূন্য থাকলেও নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয় না বলেও অভিভাবকরা অভিযোগ করেন।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া আমিনুর রহমান বলেন, “সভাপতি তার আত্মীয় তাহমিনা পারভিনকে সুপারিনটেনড্যান্টের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়ে মাদ্রাসা চালাচ্ছেন। নিয়মবর্হিভূতভাবে তিনি তার ছেলেকে সহকারী মৌলভি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।”

অভিযোগ সম্পর্কে শিক্ষক ওয়াহাব বলেন, “আমার নিবন্ধন সনদ জাল নয়। নিয়োগের দুই-তিন বছর পর আমি নিবন্ধন পাস করেছি। বিষয়টির জন্য ম্যানেজিং কমিটি ও নিয়োগকারীরা দায়ী।”

মঙ্গলবার বেলা ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত মাদ্রাসাটিতে অবস্থান করে দেখা গেছে, শিক্ষকরা বসে গল্প করছেন। আর শিক্ষার্থীরা কেউ কেউ ক্লাসরুমে, কেউ কেউ বাইরে হৈহল্লোর করছে। ক্লাস ওয়ান থেকে এবতেদায়ী পর্যন্ত সব ক্লাসে দুই থেকে চারজন করে শিক্ষার্থীকে উপস্থিত দেখা গেছে।

এ বিষয়ে সভাপতি রুবিয়া খাতুনের খোঁজ করলে তার ছোট ছেলে শিক্ষক ওয়াহাবসহ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, সভাপতি আত্মীয়বাড়ি বেড়াতে গেছেন।

মোবাইল ফোন নম্বর চাইলে ওয়াহাব একটি নম্বর দেন। কিন্তু তাতে ফোন করলে সভাপতির বড় ছেলে আব্দুর রউফ রিসিভ করেন।

আব্দুর রউফ বলেন, “মা ফোন ব্যবহার করেন না।”

ভারপ্রাপ্ত সুপাররিনটেনড্যান্ট তহমিনা পাভিন ২০ পরীক্ষার্থীর সবাই ফেল করার বিষয়ে বলেন, “এটি একটি অ্যাক্সিডেন্ট মাত্র। আগামীতে ভাল করার চেষ্টা করব।”

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছুটিতে থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জেলা প্রশাসক আতিকুর রহমান বলেন, “এ বছর ২০ পরীক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই ফেল করেছে। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”