বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কৃষক পরিবারের সদস্যরা পাকা ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন, কিন্তু যারা মৌসুমি শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল তারা শ্রমিকের অভাবে কাজগুলো দ্রুত করতে পারছেন না।
সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের সরসকান্তি বিশ্বাস (৫০) বলেন, তিনি এ বছর চার বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন।
“ফলন ভাল। কিন্তু শ্রমিক নেই। বাধ্য হয়ে নিজেরাই মানে স্ত্রী, ছেলে ও আমি নিজে কাজ করছি। দিন-রাত কাটাই-মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় যাচ্ছে।”
যাদের পরিবারে কর্মক্ষম লোক নেই, পুরোটাই মৌসুমি শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল তাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখা গেছে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বালাডাঙ্গা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব ভগীরথ জয়ধর বলেন, “শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারছি না।
“এদিকে প্রতিদিনই ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষেতের পাকা ধান নষ্ট হচ্ছে। দ্রুত কাটাই-মাড়াই করে ঘরে তুলতে না পারলে ক্ষেতের ধান ক্ষেতেই নষ্ট হবে। দুশ্চিন্তায় পড়েছি।”
একদিকে শ্রমিকের অভাব আরেক দিকে দু-একজন শ্রমিক পাওয়া গেলেও মজুরি বেশি বলে চাষিরা জানান।
“সরকার কৃষি বিভাগের মাধ্যমে কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে ক্ষেতে বসেই আমাদের ধান কাটাই-মাড়াই করার ব্যবস্থা করলে আমরা এ সংকট থেকে মুক্তি পাব।”
এই গ্রামে ধান কাটতে এসেছেন বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার গুলসিখালী গ্রামের ৫০ বছর বয়সী দেলোয়ার হোসেন।
“ধান কাটতে হলে বৃষ্টি ভিজতে হয়। রোদে পুড়তে হয়। কাদা পানিতে নামতে হয়। এ কারণে শ্রমিকরা এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। এখন ধান কাটা পরিশ্রমের কাজ কেউ করতে চায় না।”
দেলোয়ারের সঙ্গী আব্দুল হক (৪৭) শ্রমিক সংকটের কারণ সম্পর্কে আরও বলেন, “এখন সারাদেশে একযোগে ধান কাটা শুরু হয়েছে। চাহিদা বেড়েছে। শ্রমিকরা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় এ সংকট প্রকট হয়েছে।”
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নতুন প্রজন্ম কৃষিশ্রমে আগ্রহ হারাচ্ছে।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-পরিচালক সমীর কুমার গোস্বামী বলেন, “অন্য কাজের সুযোগ থাকায় নতুন প্রজন্ম কঠোর পরিশ্রমের কৃষিপেশায় আসতে আগ্রহী নয়। তাই দিন দিন কৃষিতে শ্রমিক সংকট বাড়ছে। রোপণ, পরিচর্যা, সার দেওয়া, আগাছা সাফ করা, কাটা, মাড়াই ও বস্তাবন্দিতে অধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে।
“কৃষি যান্ত্রিক করার মাধ্যমে শ্রমিক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এছাড়া দ্রুত কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে একই সঙ্গে ধান কাটা, মাড়াই ও বস্তাবন্দি করার ব্যবস্থা করা হলে কৃষকের ধান প্রাকৃতিক দুযোগে পড়বে না বলে আমরা মনে করি।”
এ বছর এ জেলায় প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরে আবাদ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ধানে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয়নি। এ কারণে বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি।”