‘তিন দিন’ পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে নারীর মৃত্যু, প্রতিকার চায় পরিবার

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় ‘ঝড়ে ছিঁড়ে পড়া’ বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে এক গৃহবধূর মৃত্যুর জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন স্বজনরা।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2018, 06:21 PM
Updated : 28 April 2018, 06:50 PM

এ ঘটনায় থানায় মামলা না নেওয়ারও অভিযোগ করেন পরিবারের সদস্যরা।  তবে পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

গত ২৫ মার্চ ঝড়ে ঘাটাইল উপজেলার দিগড় ইউনিয়নের আলুপাকুটিয়া গ্রামে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে। তিন দিন পর (২৮ মার্চ) ওই তারে জড়িয়ে মারা যান ওই গ্রামের আফাজ উদ্দিনের (৫০) স্ত্রী ফুলজান বেগম (৪৫)।

সিমেন্টের খুঁটিতে হালকাভাবে লাগিয়ে রাখা অত্যাধিক উচ্চ ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক তার। ছিড়ে পড়া এরকম একটা তারেই বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়া দুই পাকুটিয়া গ্রামের ফুলজান বেগম।

ফুলজানের ছেলে মো. সুমন হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঝড়ে বিদ্যুতের কভারবিহীন তার ছিঁড়ে পড়ে। এর তিন দিন পর সকালে মা (ফুলজান বেগম) জমির ধান দেখতে গেলে ওই তারের স্পর্শে তার মৃত্যু হয়।

“অনেক খোঁজাখুঁজির পর দুপুর ২টায় ধান ক্ষেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।”

স্থানীয় যুবক মেহেদী হাসান মঞ্জু বলেন, আলুপাকুটিয়া গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি মৃত কোরবান আলীর ছেলে মোস্তফা ও তার চাচাত ভাই মৃত রহমানের ছেলে আজমত ওরফে (পাঙ্গাস) এলাকয় বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলে প্রতি জনের কাছ থেকে ২,৭০০ (দুই হাজার সাতশ) টাকা করে এবং প্রতি সেচ পাম্পের মালিকের কাছ থেকে ৭,০০০ (সাত হাজার) টাকা করে আদায় করেন।

“এভাবে শতাধিক লোকের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা আদায় করেন তারা।”

মেহেদীর অভিযোগ, “এই গ্রামের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার সময় নিয়ম অনুযায়ী তার ও খুঁটি না দিয়ে নিম্নমানের তার ও বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করা হয়। এর ফলে অল্প বাতাসে তার ছিঁড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।”

হালকা বাঁশের খুঁটিতে প্লাস্টিকের আবরণহীন তারে ছেয়ে গেছে পাকুটিয়া চরাক্ষেত

ফুলজান বেগমের মৃত্যুর পর তার ছেলে সুমন ও মেয়ে খাদিজা আক্তার বিদ্যুৎ লাইন ত্রুটিপূর্ণ বলায় মোস্তফা ও আজমত তাদেরকে মারতে উদ্যত হন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

সুমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন বলেন, “এ সময় প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে তারা আমাদের মারতে পারেনি।”

এ বিষয়ে মোস্তফার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপানারা যা খুশি লেখেন, তাতে আমার কিছু করতে পারবেন না।”

মোস্তফার চাচাত ভাই আজমত আলী ওরফে (পাঙ্গাস) বিদ্যুতের লাইন দেওয়ার জন্য টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, “ঝড়ে তার ছিঁড়ে পড়ার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এজন্য কেউ দায়ী নয়।”

আলুপাকুটিয়া গ্রাম ঘাটাইল উপজেলায় হলেও এখানে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার কাজ হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কালিহাতি কার্যালয় থেকে।

বাঁশের খুঁটিতে লাগানো প্লাস্টিকের আরণহীন হাইভোল্টেজের তারে সেচ প্রকল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহ।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কালিহাতি উপজেলা প্রকৌশলী শেখ ফিরোজ কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তার ছিঁড়ে পড়ার খবর কেউ আমাদের জানায়নি। মৃত্যুর খবরও আমরা শুনিনি।”  

নিম্নমানের খুঁটি ও তারের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি তাদের দেখার বিষয় নয়। ঠিকাদাররা ঢাকা থেকে কাজের আদেশ নিয়ে কাজ করে। সেখান থেকে কর্মকর্তারা এসব দেখাশোনা করেন। 

মেহেদির অভিযোগ, ঘটনার পরদিন মামলা করার জন্য সুমনের এক চাচাত ভাই ও তিনি ঘাটাইল থানায় যান।

“সেখানকার সেকেন্ড অফিসার এসআই ফরিদ হোসেনের কাছে গেলে তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তির দাফন হয়ে গেছে। এখন আর কিছু করা যাবে না। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে আপনাদের বিপদ হবে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঘাটাইল থানার এসআই ফরিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেউ এ রকম অভিযোগ নিয়ে এসেছে, আর আমি ফিরিয়ে দিয়েছি তা আমার মনে পড়ছে না। এই ঘটনায় তো সংশ্লিষ্টদের ‘নেগলিজেনসি’ আছে। কোনো বিষয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে আমার উপরের কর্মকর্তারা আছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করি। এরকমটা হওয়ার কথা নয়।”