নীলফামারীতে দুদকের অভিযোগপত্র জাল, গ্রেপ্তার ৩

অর্থ আত্মসাতের মামলায় দুদকের দেওয়া অভিযোগপত্র জালিয়াতির অভিযোগে নীলফামারী আদালতের এক কর্মচারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2018, 04:39 PM
Updated : 23 April 2018, 04:39 PM

রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত নীলফামারীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

সোমবার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সামিউল ইসলামের আদালতে হাজির করলে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।  

গ্রেপ্তাররা হলেন জেলা জজ আদালতের দায়রা সহকারী ও ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের ইব্রাহিম আলীর ছেলে ইসমাইল হোসেন (৩৩), আইনজীবী সহকারী ও ডিমলা উপজেলার দক্ষিণ তিতপাড়ার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে আবুল কাশেম (৬০) এবং নীলফামারী প্রধান ডাকঘরের সাবেক কর্মচারী ও সৈয়দপুর  উপজেলার পুশ্চিম বেলপুকুর চাকদাপাড়ার মৃত মকিম উদ্দিনের ছেলে তসলিম উদ্দিন (৬৫)।

নীলফামারী সদর থানার পরির্দশক বাবুল আকতার জানান, ২০০৫ সালে নীলফামারীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে দাখিল হওয়া একটি জালিয়াতির মামলায় দুদকের দেওয়া অভিযোগপত্র জাল করেন এ তিনজন।

পরে বিষয়টি প্রকাশ হলে নীলফামারী বিচারিকস হাকিম আদালতের ভারপ্রাপ্ত নাজির সোহেল শাহ্ ১৯ এপ্রিল নীলফামারী সদর থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় আসামি করেন আদালতের দায়রা সহকারী ইসমাইল হোসেনকে।  

ওই মামলায় ইসমাইলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি মতো বাকি দুইজনকে গ্রপ্তার করা হয়।

সোহেল শাহ্র মামলার নথি থেকে জানা যায়, নীলফামারী প্রধান ডাকঘরে ২০০৫ সালে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের চার কোটি ৩২ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দুটি মামলা হয়। পরবর্তীতে মামলা দুটি দুদকে হস্তান্তর হয় এবং বিচারের জন্য জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে পাঠানো হয়।

তদন্ত শেষে দুদক ২০১৬ সালের ২৮ অগাস্ট পাঁচ জনের নামে অভিযোগপত্র দেয়।  

মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, জেলা জজ আদালতের দায়রা সহকারী মো. ইসমাইল হোসেন মামলা দুটির অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন; কিন্তু দুই মাস দুই দিন পর (৩১ অক্টোবর) তা গ্রহণ দেখান। পাশাপাশি দুদকের দাখিল করা অভিযোগপত্র বদলিয়ে একটি জাল অভিযোগপত্র মামলার নথিতে সংযুক্ত করেন।

ওই জাল অভিযোগপত্রে তিন জনের নাম রাখা হয় এবং অপর দুই জনের নাম বাদ দেওয়া হয়।

এই জাল অভিযোগপত্র তৈরিতে মুখ্য বিচারিক হাকিম শেখ মো. নাসিরুল হক, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. সামিউল ইসলাম ও মুহাম্মদ আকরাম হোসেনের স্বাক্ষর জাল করা হয় বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়।

নীলফামারী জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অক্ষয় কুমার রায় বলেন, ২০১৭ সালের ৬ মার্চ মামলা দুটির শুনানিকালে অভিযুক্ত আসামি পাঁচজনের স্থলে তিনজন দেখে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা বিষয়টি আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের নজরে আনেন।

তখন আদালত নথিতে থাকা অভিযোগপত্র যাচাইয়ের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন সম্বন্বিত জেলা কার্যালয় দিনাজপুরের উপ-পরিচালক বরাবরে পাঠানোর আদেশ দেন। যাচাইয়ে মামলার নথিতে জাল অভিযেগপত্র সংযুক্ত এবং বিচারকের স্বাক্ষর জালের বিষয়টি ধরা পড়ে বলে জানান অক্ষয় কুমার।

তিনি আরও জানান, এই জালিয়াতির মামলায় প্রথমে দায়রা সহকারী মো. ইসমাইল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকারসহ জড়িত অপর দুইজনের নাম প্রকাশ করেন।

“বিকালে তাদেরকে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সামিউল ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে দায়রা সহকারী ইসমাইল হোসেন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবিন্দ দেন।”