‘মঞ্জুর ড্রাইভার কি হাওয়া খেয়ে গাড়ি চালান’

নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে উল্টো তার বিরুদ্ধে হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে খুলনায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের শিবির থেকে।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2018, 11:34 AM
Updated : 17 April 2018, 11:37 AM

মঞ্জুর মাসিক আয় ২০ হাজার টাকা হলে নিজের গাড়ির চালকের বেতন তিনি কীভাবে দেন, তা জানতে চেয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এম এম কামাল হোসেন।

মঙ্গলবার খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থীর হলফনামা নিয়ে এই প্রশ্ন রাখেন তিনি।

আগের দিন সংবাদ সম্মেলন করে মঞ্জুর তোলা অভিযোগের জবাব দিতে এই সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন নৌকার মেয়র প্রার্থী খালেক।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে মঞ্জুর প্রতি আহ্বান রেখে বলেন, “আমি প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসী। প্রতিযোগিতা করেন, জনগণ যাকে ভোট দেবে, তিনি নির্বাচিত হবেন।”

আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠেয় খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে মুখোমুখি এখন তালুকদার খালেক ও মঞ্জু।

দুজনের মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তা বৈধ ঘোষণার পর সোমবার মঞ্জু অভিযোগ তোলেন, তালুকদার খালেক হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন।

নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় কোনো প্রার্থী মিথ্যা তথ্য দিলে তার প্রার্থিতাও বাতিল হতে পারে।

হলফনামায় মঞ্জু তার মাসিক আয় দেখিয়েছেন ২০ হাজার ২৫০ টাকা।

এই বিষয়টি তুলে আওয়ামী লীগ নেতা কামাল বলেন, “তার (মঞ্জু) মাসিক আয় মাত্র ১৬ হাজার ৬৬৭ টাকা, যা বর্তমানে একজন রিকশাচালকের আয়ের চেয়েও কম আয়।

“তাহলে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর দেড় কোটি টাকার গাড়িটি চলে কি বাতাসে? আর ড্রাইভারও কি হাওয়া খেয়ে গাড়ি চালান? মঞ্জু যে আলিশান বাড়িতে থাকেন, তার মাসিক ভাড়া কম করে হলেও ২০ হাজার টাকা। তাহলে কি তিনি বাড়িওয়ালাকে জিম্মি করে অথবা বিনা ভাড়ায় থাকেন?”

কামাল বলেন, “আমাদের বাধ্য করবেন না আপনার হাঁড়ির খবর বের করতে। এই বাজারে পাজেরো গাড়ি চালিয়ে, আলিশান বাড়িতে থেকে, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে ১৫/১৬ হাজার টাকায় চলা যায় না, তা সবাই জানেন।

“তাহলে কি আমরা ধরে নেব যে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অবৈধ ব্যবসা আছে অথবা তালুকদার আবদুল খালেক মেয়র থাকা অবস্থায় যে সাত শত কোটি টাকা রেখে এসেছিলেন কর্পোরেশনে, তা বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনি ও  নজরুল ইসলাম মঞ্জু ভাগ বাটোয়ারা করে খেয়েছেন।”

গত বারের আগে খালেক ছিলেন খুলনার মেয়র। গতবার তিনি ভোট করলেও বিএনপি নেতা মনির কাছে হেরেছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে খালেক তার বিরুদ্ধে মঞ্জুর আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “১৯৭৭ সাল থেকে আমি নির্বাচন করছি। সব নির্বাচনেই আমি হলফনামা দিয়েছি। কোনো সময় কোনো তথ্য গোপন করে হলফনামা জমা দিইনি।

“আমি ও আমার স্ত্রী একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। লাভজনক যে সব প্রতিষ্ঠানের সাথে আমি জড়িত রয়েছি, সব কিছুর হিসাব আমি দাখিল করেছি। এখানে চাতুরতার কোনো বিষয় নেই।”

খালেক বলেন, তিনি হলফনামায় সাউথ-বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের বিষয়ে তথ্য উল্লেখ করেছেন।

“আমি নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি চেয়ারম্যান। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়ম অনুয়ায়ী কোনো ট্রাস্টি চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্থিক সুবিধা পান না। যে কারণে আমি হলফনামায় নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির কথা উল্লেখ করিনি।”

ইস্টার্ন পলিমার লিমিটেড নামে যে শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার সঙ্গে নিজের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন খালেক।

সংবাদ সম্মেলনে খালেকের সঙ্গে কামাল ছাড়াও ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এমপি,  খুলনা জেলা সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ, নগর সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এমপি।

দলীয় কার্যালয়ে এক সভায় বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু

আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি প্রার্থী মঞ্জু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে তার জবাব দেবেন।

তার আয় নিয়ে কথার জবাবে বিএনপি কেন্দ্রীয় এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, “আমি খুব সাদামাটা জীবন যাপন করি। ডাল-ভাত খেয়ে চলি। আমার ছেলে ঢাকায় টিউশনি করে নিজের পড়া লেখার খরচ চালায়।”

সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জু গাড়ির বিষয়ে বলেন, “আমার গাড়ির কোটি টাকা দাম নয়। সংসদ সদস্য থাকাকালে একটি ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি আমি কিনি। আমার স্ত্রীর ব্যাংকে থাকা টাকার লভ্যাংশ দিয়ে এবং বাড়িভাড়ার টাকা দিয়ে আমার সংসার চলে।”