মৌলভীবাজারে হয়ে গেলো চড়কপূজা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে উপজেলার ছয়শ্রী দিঘীরপাড়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী চড়কপূজা।

মৌলভীবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2018, 04:50 AM
Updated : 16 April 2018, 04:50 AM

ছয়শ্রী দিঘীরপাড় চড়কপূজা কমিটির আয়োজনে গত শনিবার শুরু হওয়া দুইদিনের এ উৎসব ‘ফেরা’ চড়ক পূজার মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

মূলত হিন্দু সম্প্রদায় এ উৎসব পালন করলেও কমলগঞ্জের ছয়শ্রীসহ আশেপাশের এলাকার সকল ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে এ উৎসব হয়ে উঠেছিল সার্বজনীন।

চৈত্র মাসের সংক্রান্তিতে চড়কপূজা অনুষ্ঠিত হয়; এর অপর নাম নীলপূজা। এ পূজা খুবই আড়ম্বরপূর্ণ। এতে জলভরা একটি পাত্রে শিবের প্রতীক শিবলিঙ্গ রাখা হয়, যা পূজারীদের কাছে ‘বুড়োশিব’ নামে পরিচিত। 

ছয়শ্রী দিঘীরপাড় চড়কপূজা উদযাপন কমিটির নেতা অসমঞ্জু প্রসাদ রায় চৌধুরী বলেন, চড়কপূজায় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ অংশগ্রহণ করে বলে এ উৎসব কেবল হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়, এটি সার্বজনীন।

চড়কপূজার বিশেষ অংশ হল কুমিরের পূজা, জ্বলন্ত আগুনের ওপর হাঁটা, কাঁটা আর ছুরির ওপর লাফানো, বাণফোঁড়া, শিবের বিয়ে, অগ্নিনাচ, চড়কগাছে দোলা এবং দানো-বারানো বা হাজারা পূজা।

দানো-বারানো বা হাজারা পূজা করা হয় সাধারণত শ্মশানে। চড়কপূজার মূলে রয়েছে ভূতপ্রেত ও পুনর্জন্মবাদের ওপর বিশ্বাস। এর বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রাচীন কৌমসমাজে প্রচলিত নরবলির অনুরূপ।

চড়ক উৎসবে ‘দৈহিক যন্ত্রণা’ ধর্মের অঙ্গ বলে বিবেচিত হয়। চড়কগাছে অর্থাৎ একটি উঁচু খুঁটিতে ভক্ত বা সন্নাসীকে লোহার হুক দিয়ে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘোরানো হয়। তার পিঠে, হাতে, পায়ে, জিহবায় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে বাণ ফোঁড়া, অর্থাৎ লোহার শলাকা বিদ্ধ করা হয়।

কখনও কখনও জ্বলন্ত লোহার শলাকা তার গায়ে ফুঁড়ে দেওয়া হয়। ১৮৬৫ সালে ইংরেজ সরকার আইন করে এ নিয়ম বন্ধ করলেও গ্রামের সাধারণ লোকের মধ্যে এখনও তা প্রচলিত আছে।

শনিবার দপুর থেকে বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থী উৎসবস্থলে আসতে শুরু করেন। বিকালে দর্শনার্থী ও ভক্তদের সেখানে শিবের ও কালির নাচ দেখানো হয়। সন্ধ্যায় চড়ক পূজা শেষে রীতি অনুযায়ী চারজন ভক্তের পিঠে দুটি লোহার বড়শি গেঁথে রশিতে বেঁধে ঝুলিয়ে চড়ক গাছে ঘুরানো হয়।

এ সময়ে অনেকে বাতাসা আর কলা তাদের দিকে উড়িয়ে দেন, আর দর্শনার্থীরা তা কুড়িয়ে নেন।

রোববার ছয়চিরি দিঘীর পূর্বপাড়ে একটি, উত্তর পাড়ে একটি, দক্ষিণ পাড়ে দুটি চড়ক গাছ স্থাপন করে ফেরা চড়ক পূজা করা হয়। বিভিন্ন অলৌকিক ধর্মীয় কর্মসূচী উপভোগ করার জন্য প্রতি বছরের মত এবারও ব্যাপক দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল।

প্রতিবছরের মত এ বছরও চড়কপূজা উপলকক্ষ্যে দুই দিনের মেলা অনুষ্ঠিত হয়।