মাকে সুস্থ করা হলো না হিমেলের

মায়ের মেরুদণ্ডের হাড়ভাঙ্গা চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন গাজীপুরের হিমেল; অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়ে মাকে সুস্থ করার সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না তার।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 April 2018, 07:20 AM
Updated : 15 April 2018, 07:20 AM

শুক্রবার রিয়াদের আল নূরা ইউনিভার্সিটির আবাসিক এলাকায় শ্রমিকদের থাকার একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ছয় বাংলাদেশির একজন হিমেল। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চারজন।  

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের উত্তরসোম গ্রামের মো. মোজাম্মেল হক ভূইয়ার ছেলে হিমেল (২৮)। আল-নূর ইউনিভাসির্টিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করতেন তিনি।

এ বছরের জানুয়ারিতে সৌদি আরবে পাড়ি জমান হিমেল। দুর্ঘটনার পর রিয়াদের সিমুচি হাসপাতালে গিয়ে ওই দেশে অবস্থানরত তার চাচা মো.কামাল হোসেন ভূইয়া তার লাশ শনাক্ত করেন। পরে মৃত্যুর খবর বাংলাদেশে স্বজনদের জানান। 

ভাইয়ের বরাত দিয়ে হিমেলের বাবা মোজাম্মেল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার ভাই মক্কা এলাকায় কাজ করেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি বিমানে করে সিমুচি হাসপাতালে যান। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সৌদি পুলিশের সহযোগিতায় হিমেলের মরদেহ শনাক্ত করেন।

“লাশ দেশে পাঠাতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগতে পারে বলে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে।”

উপজেলা সাব-রেজেস্ট্রি অফিসে দলিল লেখার কাজ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তিন ছেলের মধ্যে বড় হিমেল। সে লেখাপড়া বেশি করেনি। তার মায়ের মেরুদণ্ডের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে পারছিলাম না।

“এ কারণে হিমেল বার বার বিদেশে যাওয়ার বায়না ধরলেও পরিবারের কারো তাতে সম্মতি ছিল না। তারপরও ছেলের ইচ্ছার পূরণে এক সময় রাজি হই।”

পরে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ঢাকার শাহাজাদপুর এলাকার ‘কোকিল ট্রাভেলসের’ মাধ্যমে হিমেল সৌদি আরবে যায় বলে জানান মোজাম্মেল।

ছেলের সহকর্মী মোতালেব হোসেনকে উদ্ধৃত করে হিমেলের বাবা বলেন, আল-নূর ইউনিভাসির্টির আবাসিক এলাকায় শ্রমিকদের তিনতলা আবাসিক ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে।

“ওই কক্ষে ছয় বাংলাদেশিসহ সাতজন থাকতেন, সবাই মারা গেছেন।”

এদিকে হিমেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর মা খালেদা আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বড় ভাইকে হারিয়ে ছোট ভাই মাহিন ভূইয়া (৯) ও লামিম ভূইয়া (৬) কিংকর্তব্যবিমূঢ়।

খালেদা আক্তার বলেন, “আমার মেরুদণ্ডের হাড়ভাঙ্গা চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। স্বামীর রোজগারের অর্থে চিকিৎসার সম্ভব হচ্ছিল না বলে বিদেশ পাড়ি দেয় হিমেল।

“গত ১২ এপ্রিল শেষবার হিমেলের সঙ্গে শেষ কথা হয়। সৌদিতে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছে বলে হিমেল তখন জানায় “

কোকিল ট্রাভেলসের স্বত্ত্বাধিকারী রাসেল আহমেদ ও তুহিন হোসেন সৌদির একটি কোম্পানিতে কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে হিমেলকে নিয়ে গেলে সেখানে প্রায় তিন মাস তাকে বসিয়ে রাখা হয় বলে অভিযোগ করেন খালেদা।

হিমেলের পরিবারের যে অপূরণীয় ক্ষতি হল সেটাও পূরণ হবার নয় মন্তব্য করে গাজীপুর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, তার মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে।