গ্রেপ্তার শেফালি আড়াইহাজার উপজেলার উচিতপুরা ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামের ওমান প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী।
আড়াইহাজার থানার ওসি এম এ হক জানান, স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে আনোয়ারের বাড়ি থেকে তাদের বড় ছেলে হৃদয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তখনই শেফালিকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এ ঘটনায় শেফালির সাত বছর বয়সী আরেক সন্তান জিহাদও দগ্ধ হয়েছে। তাকে পাঠানো হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
নিহত হৃদয় (৯) বারইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। দগ্ধ জিহাদ (৭) ওই স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানিয়েছে, ১২ বছর আগে বারইপাড়ার বাহরাইন প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে ঢাকার কেরাণীগঞ্জের সুন্দর আলীর মেয়ে শেফালী বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা বারইপাড়ায় বসবাস শুরু করেন। তাদের দুই সন্তান হৃদয় ও জিহাদ।
ওসি এম এ হক জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে শেফালী বেগমের ঘর থেকে আগুনের ধোঁয়া বের হতে দেখে প্রতিবেশী ও শেফালীর শ্বশুরবাড়ির লোকজন ঘরের দরজা ভেঙে ভেতর ঢুকে বিছানায় আগুন দেখতে পান। বিছানায় হৃদয় এবং বিছানার কোনায় জিহাদ আগুনে পুড়ছে। আর শেফালী মেঝেতে শুয়ে গোঙ্গাচ্ছে।
“জিহাদেক উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানোর পরামর্শ দেন।”
খবর পেয়ে সকাল ৮টার দিকে পুলিশ হৃদয়ের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায় এবং হৃদয়ের মা শেফালী বেগমকে আটক করে বলে জানান ওসি।
নিহত হৃদয়ের দাদা বিল্লাল হোসেন বলেন, গত বৃহস্প্রতিবার গভীর তার এক আত্মীয় এসে জানান আনোয়ার হোসেনের ঘর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এ কথা শুনে তিনি ঘর থেকে বের হয়ে দরজা খোলার জন্য বেশ কয়েকবার ধাক্কা দেন। কিন্ত ভেতর থেকে দরজা লাগানো থাকায় পাশের দরজায় দিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখেন আগুনের কুণ্ডলি। তার মধ্যে বড় নাতি পুড়ে নিথর দেহে পড়ে আছে। আরেক নাতি ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। আর শেফালী ছোট নাতির পাশে গোঙ্গাচ্ছিল। পরে তিনি ছোট নাতিকে কোলে নিয়ে দ্রুত ঘরের বাইরে চলে আসেন।
শেফালীর পরকীয় সম্পর্কে বিল্লাল হোসেন বলেন, স্থানীয় মোমেন মিয়ার সঙ্গে পরকীয়া সর্ম্পকে শেফালীকে তারা অনেক নিষেধ ও বাধা দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বিচার সালিশও হয়েছে।
“মোমেন প্রায়ই শেফালীর ঘরে আসত; কিন্তু শেফালী অস্বীকার করত। কয়েক মাস আগে মোমেনের স্ত্রী স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে মোমেনের সাথে শেফালীর বেশকিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি আমাদের দেখায়।”
বিল্লাল বলেন, এক পর্যায়ে শেফালী মোমেনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা স্বীকার করে। বিষয়টি জানতে পেরে আনোয়ার তাকে তালাক দেন। কিন্তু পরবর্তীতে শেফালী ভুল স্বীকার করলে আনোয়ার দুই সন্তানের কথা ভেবে দেশে এসে শেফালীকে আবার ঘরে তোলেন। সেবার আনোয়ার ১২ দিন দেশে থেকে আবার বাহরাইনে চলে যান।
হৃদয়ের দাদী সখিনা বেগম নাতিকে আগুন পুড়িয়ে হত্যার জন্য ছেলের বউ শেফালী ও তার প্রেমিক মোমেনর শাস্তি দাবি করেছেন।
শেফালী বেগম পুলিশ হেফাজতে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে মোমেন তার ঘরের জোর করে প্রবেশ করে। এ সময় শেফালী তাকে অনেক অনুনয় করে চলে যেতে বলেন। কিন্তু মোমেন ভাত খাওয়ালে চলে যাবে বলে জানায়।
“পরে তাকে আমি দুটি ডিম সিদ্ধ করে খাওয়াই এবং গরুর নারীভুড়ি গরম করে ভাত খওয়াই। এ সময় মোমেন জোর করে আমাকে ভাতের সাথে বড়ি খাওয়ায়। তার কিছুক্ষণ পর আমি অচেতন হয়ে পড়ি। তার পরে কী ঘটেছে আমি জানি না। সকালে লোকজন এসে আমাকে ঘুম থেকে তুলে মাথায় পানি ঢেলে সুস্থ করে।”
ওসি এম এ হক বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, শেফালীর সঙ্গে মোমেনের অনৈতিক সর্ম্পক দেখে ফেলায় প্রেমিক ও শেফালী মিলে দুই ছেলের বিছানার কম্বলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে থাকতে পারে। ওই সময় ঘরে তারা দুইজন ছাড়া আর কেউ ছিল না।
“প্রথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শেফালী স্বীকার করেছে মোমেন রাত ৯টায় তার ঘরে এসেছে। সে নিজেকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা কথা বলছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে বলে জানান ওসি।