গাইবান্ধায় সোলার প্লান্ট নিয়ে সংঘর্ষ, পুলিশের গুলিবর্ষণ

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় প্রস্তাবিত একটি পাওয়ার প্লান্টের জমি ভরাট নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশের গুলিতে পাঁচজন আহত হয়েছেন।

রংপুর প্রতিনিধিগাইবান্ধা ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 April 2018, 03:48 PM
Updated : 10 April 2018, 03:48 PM

বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী স্থানীয় আনসার ক্যাম্প জ্বালিয়ে দিয়েছে।

পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভায়।

মঙ্গলবার বিকালে তারাপুর ইউনিয়নের চরখোর্দ্দা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আতিয়ার রহমান জানান।

আহতদের মধ্যে শরীফুন্নেসা (৪০), মুক্তা বেগম (২০), রোজিনা খাতুন (২৭), রুপিয়া খাতুন (২২) ও রেজাউল মন্ডলকে (৩০) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের সবার বাড়ি চরখোর্দ্দা গ্রামে। বাকি আহতদের নাম জানা যায়নি।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. শফিকুল ইসলাম জানান, রাত ৯টার দিকে এ পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে শটগানের ছররা গুলি লেগেছে।

ওসি আতিয়ার রহমান জানান, ‘বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড’ এবং ‘চীনের টিবিইএ জিনজিয়াং সানওয়েসিস কোম্পানি লিমিটেড’ যৌথ মালিকানায় করেছে ‘তিস্তা সোলার লিমিটেড’।

তিনি জানান, ২০০ মেগাওয়াটের একটি সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য সুন্দরগঞ্জের তারাপুর ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী লাটশালা ও চরখোর্দ্দা গ্রামে সম্প্রতি ৪ থেকে ৭ শত একর জমি ক্রয় করে ‘তিস্তা সোলার লিমিটেড’।

শুরু থেকেই স্থানীয় লোকজন ‘কৃষি জমি ও বাস্তভিটা রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’র ব্যানারে সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ না করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বলে জানান ওসি।

ওসি আতিয়ার বলেন, গত শনিবার এসব জমি বালু দিয়ে ভরাট করার জন্য ড্রেজার বসনো হয়। এ সময় স্থানীয়রা বাধা দিলে ‘তিস্তা সোলার লিমিটেড’-এর লোকজনের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় এলাকাবাসী ড্রেজার ভাংচুর করে।

এ ঘটনায় তিস্তা সোলার লিমিটেড সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করে বলে জানান ওসি আতিয়ার।

ঘটনার বিবরণে ওসি বলেন, মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ ওই এলাকায় গেলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

“পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য শটগানের ১০ রাউন্ট গুলি করে।”

এরপর লাটশালা ও চরখোর্দ্দা গ্রামের লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

স্থানীয়রা জানায়, লাটশালা ও চরখোর্দ্দা গ্রামের লোকজন পুলিশকে ঘেরাও করে রাখে এবং চরখোর্দ্দা গ্রামে তিস্তা সোলার লিমিটেড-এর স্থাপিত আনসার ক্যাম্পটি জ্বালিয়ে দেয়।

ওসি আতিয়ার বলেন, সন্ধ্যায় গাইবান্ধা থেকে ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নেভায় এবং গাইবান্ধা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে অবরুদ্ধ পুলিশদের উদ্ধার করে।

সন্ধ্যায় তিনি বলেন, “এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”

তারাপুর কৃষি জমি ও বাস্তভিটা রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, প্ল্যান্ট নির্মাণে তাদের বাপদাদার আবাদী জমি ও বসতভিটা দখল হয়ে গেলে তারা বেকার হয়ে পড়বেন এবং মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে ফেলবেন। তাই ব্যক্তি মালিকানার জমি তারা দিতে নারাজ।

জমি অধিগ্রহণ না করেই আবাদি জমিতে মাটি ভরাট করা হচ্ছিল অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এতে বাধা দেওয়ায় প্রকল্পের লোকজন ও পুলিশ জনতাকে লাঠিপেটা করে এবং গুলি ছোড়ে।”

সুন্দরগঞ্জের ইউএনও গোলাম কিবরিয়া বলেন, “মাইকিং করে জনতাকে শান্ত করা হয়েছে। সন্ধ্যার আগেই স্থানীয়রা বাড়ি ফিরে গেছে। 

সন্ধ্যায় গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্যাহ আল ফারুক ঘটনাস্থল থেকে বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি ছোড়া হলে ছোটাছুটি করতে গিয়ে কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে উপর থেকে গুলির খোসা পড়ে দুয়েকেজনের পায়ে লেগে আহত হতে পারেন।”

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যায় গাইবান্ধা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, “ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”