নড়াইলে গ্রাহকদের ৩০ কোটি টাকা ‘আত্মসাৎ’ এনজিওর

নড়াইলের কালিয়ায় গ্রাহকদের প্রায় ৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে একটি বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে।

নড়াইল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2018, 03:12 PM
Updated : 2 April 2018, 04:08 PM

অভিযোগ পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে ‘চলন্তিকা যুব সোসাইটি’ নামের সংস্থাটি বন্ধ করে দিয়েছেন কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা।

তিনি বলেন, “খবর পেয়ে প্রতারকদের ধরতে সেখানে যাই। কাউকে না পেয়ে অফিসটি সিলগালা করা হয়েছে।”

বেসরকারি সংস্থাটি কীভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান ইউএনও।

২০০৮ সালের দিকে খুলনা ভিত্তিক সংস্থাটি কালিয়া উপজেলা শহরে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে অঞ্চল ভিত্তিক মাঠকর্মী নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকের আদলে মেয়াদী, মাসিক আমানত, ঋণ দেওয়া কর্মসূচি শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় আড়াই হাজারের মতো গ্রাহক রয়েছে।

গ্রাহকরা জানান, গ্রাহকদের নামমাত্র লোন দিলেও আমানতের টাকা ফেরত চেয়ে তারা পাননি। সম্প্রতি মেয়াদোত্তীর্ণ আমানতের টাকা তুলতে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সংস্থার নিয়মের অজুহাত দেখিয়ে নানা টালবাহানা করে।

এতে গ্রাহকদের সন্দেহ হতে শুরু হয়। এর মধ্যে এনজিওর ব্যবস্থাপক টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছে এমন খবর গত ২৮ মার্চ গ্রাহকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ওই দিন বিকালে শতাধিক গ্রাহক এনজিওর কার্যালয় ঘেরাও করেন। এতে প্রধান হিসাবরক্ষক ভজন কুমার দাশসহ কয়েকজন কর্মচারী আটকা পড়েন।

চলন্তিকা যুব সোসাইটির যশোর জোনাল অফিস উদ্বোধনের ফিতা কাটছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. খবিরুজ্জামান, ফাইল ছবি

খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে গ্রাহকদের সরিয়ে দেয়; এ সুযোগে এনজিওর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পালিয়ে যায় বলে জানান গ্রাহকরা।

এনজিওর গ্রাহক কালিয়া উপজেলার বাকা গ্রামের মোস্তফা কামাল বলেন, “আমার প্রায় ২৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।”

একই গ্রামের ইলিয়াছ হোসেন বলেন, “আমার ৩৫ হাজার টাকা এবং জোকা গ্রামের সমশের আলীর ৪৫ হাজার টাকা ছিল ওই সংস্থায়।”

সন্দীপন দাশের নামে এক লাখ টাকা জমা করা হয়েছিল সংস্থাটিতে। তার ভাই সুমন দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছয় বছরে দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেবে বলে জানিয়েছিল সংস্থাটি। সেজন্য আমার মা ছোট ভাইয়ের নামে ওই এক লাখ জমা করেছিলেন। এখন অফিসের লোকজন পালিয়ে যাওয়ায় আমার মা কান্নাকাটি করছেন।

“আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। এ রকম অনেকে সেখানে টাকা জমা করেছিল। সবাই চরম অসহায় হয়ে পড়েছে।”

এ বিষয়ে এনজিওটির কালিয়া অফিসের ব্যবস্থাপক মিলন কুমার দাশ বলেন, “জানুয়ারি মাস থেকে প্রতিষ্ঠানের এমডি মো. সরোয়ার হোসাইন এবং চেয়ারম্যান মো. খবিরুজ্জামান গ্রাহকদের ৩০ কোটি টাকার আমানত আটকে দেন; যে কারণে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারিনি।

“এ খবরটি ছড়িয়ে পড়লে গ্রাহকরা বৃহস্পতিবার দুপুরে অফিসে থাকা কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আটকে রেখে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে পুলিশ গ্রাহকদের সরিয়ে দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন।”

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. খবিরুজ্জামানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পালিয়ে যেতে সহায়তার অভিযোগ অস্বীকার করে কালিয়া থানার ওসি শেখ শমশের আলী বলেন, “প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মিলন দাশ মোবাইল ফোনে জানান-কয়েকশ গ্রাহক আমাদের অফিস ঘেরাও করে রেখেছে। আমরা বন্দি অবস্থায় আছি। আমাদের উদ্ধার করেন।

“এর প্রেক্ষিতে আমরা তাদের নিরাপত্তা দিয়েছি মাত্র।”