রাস্তা নির্মাণ নিয়ে কক্সবাজার কলেজ কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রলীগ মুখোমুখি

কক্সবাজার সরকারি কলেজের বিরোধপূর্ণ জমিতে রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রলীগ।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2018, 07:44 AM
Updated : 21 March 2018, 04:53 AM

এর জের ধরে সোমবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল থেকে ছাত্রলীগকর্মীরা ভাংচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী।

তিনি বলছেন, কলেজ কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে ‘টিআর কাবিখা’ প্রকল্পের আওতায় ওই রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করায় গত শনিবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলছেন, যে কারণ দেখিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজের উত্তর-পূর্ব দিক থেকে লিংকরোড স্টেশন পর্যন্ত ওই রাস্তা নির্মাণের বিরোধিতা করছে, তা যৌক্তিক বলে তিনি মনে করেন না। 

আর ছাত্রলীগ বলছে, রাস্তা নির্মাণের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি তাদের সমর্থন থাকলেও ভাংচুরে তাদের কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ সঠিক নয়। 

কলেজ অধ্যক্ষ ফজলুল করিম বলেন, কলেজের উত্তর-পূর্ব সীমানা দেয়াল ঘেঁষে কিছু জায়গার মালিকানা নিয়ে আদালতে এক ব্যক্তির সঙ্গে মামলা চলছে। এর মধ্যেই স্থানীয় কৃষক লীগ নেতা শেখ ইয়াকুব আলী ‘টিআর কাবিখার’ অধীনে প্রকল্পের অনুমোদন নিয়ে গত সপ্তাহে রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করেন।

“এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে শনিবার রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সোমবার দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রলীগ।”

অধ্যক্ষ বলেন, “ছাত্রলীগ মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের গেইটে এসে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় ভবনের গেইট বাইরে থেকে তালাবন্ধ থাকায় তারা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের চেয়ার ভাংচুর করে।”

ভবনের গেইটে কারা তালা লাগিয়েছে তা জানেন না দাবি করে ফজলুল করিম বলেন, “বিক্ষোভ চলার সময় অফিসের ভেতরে ছিলাম। তাই গেইটে কারা তালা লাগিয়েছে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। গেইটে দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরাও বিষয়টি খেয়াল করেনি।”

বিরোধপূর্ণ জমিতে ওই রাস্তা হলে মালিকানা বেহাত হওয়ার আশঙ্কার কথাও তিনি বলেন।

ভাংচুরে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, “আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষকে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে ভবনের গেইটে তালা লাগানো দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ার ভাংচুর চালায়। পরে গেইটের তালা ভেঙে ভেতরে যেতে চাইলে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।”

এ ঘটনায় ছাত্রলীগকে জড়ানো ‘দুঃখজনক’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রশাসনিক ভবন গেইটে হট্টগোল শুনে পরিস্থিতি শান্ত করতেই তিনি এবং তার সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেনসহ নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়েছিলেন।

সে সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সদর থানার ওসি খন্দকার ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ছাত্ররা মিছিল নিয়ে এসে প্রশাসনিক ভবনের গেইটে তালা দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ার ভাংচুর করতে থাকে। এক পর্যায়ে গেইটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ বাঁধা দেয়।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাস্তা নির্মাণসহ ১২ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে জানিয়ে ছাত্রলীগ নেতা জাকির বলেন, এসব ‘যৌক্তিক’ দাবির প্রতি তার সংগঠনের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

জামায়াত নেতা শহীদুল আলম বাহাদুরসহ জামায়াত-শিবির নেতাদের দখলে থাকা কলেজের জমি উদ্ধার, কলেজের প্রবেশ পথের মূল ফটকসহ ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী’ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবিও রয়েছে ওই ১২ দফার মধ্যে।

জাকির বলেন, কক্সবাজার শহর ছাড়াও চকরিয়া, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ থেকে প্রতিদিন ছাত্রছাত্রীরা কলেজে যাতায়াত করে। তাদের লিংকরোড স্টেশনে নেমে প্রায় এক কিলোমিটার পথ হেঁটে যাতায়াত করতে হয়।

“তাদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সরকারি বরাদ্দে রাস্তা নির্মাণের এই কাজকে কলেজ কর্তৃপক্ষের স্বাগত জানানো উচিত।”

ওই রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প কমিটির সভাপতি জেলা কৃষক লীগের নেতা শেখ ইয়াকুব আলী বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের সুপারিশে প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে প্রকল্পের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাকে।

“প্রকল্প অনুমোদনের পর প্রথম দফার বরাদ্দ পেয়ে সপ্তাহখানেক আগে নির্মাণ কাজ শুরু করি। কিন্তু ২/৩ দিন পর কলেজ কর্তৃপক্ষ মামলা থাকার কথা বলে কাজ বন্ধ করে দেয়।”  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, গতবছর কলেজের জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সে সময় শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগের কথা জানিয়ে ক্যাম্পাস থেকে লিংকরোড স্টেশনের দিকে বিকল্প রাস্তা নির্মাণের দাবি জানায়।

“তারা ওই রাস্তার নাম ‘শেখ রাসেল সড়ক’ রাখার দাবিও জানিয়েছিল। পরে রাস্তা নির্মাণের স্থানসহ প্রকল্পের নানা দিক নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার আলাপ হয়। কর্তৃপক্ষ বিকল্প রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাবে সায়ও দিয়েছিল।”

কিন্তু এখন কলেজ অধ্যক্ষসহ ‘স্বাধীনতা বিরোধী কিছু শিক্ষক’ নানা অজুহাতে রাস্তা নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন এ সংসদ সদস্য।

তিনি বলেন, “যাতায়াতের সুবিধার্থে কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজের জমির উপর নিজস্ব উদ্যোগেও যদি রাস্তা নির্মাণ করে থাকে, তাতে কলেজ কর্তৃপক্ষের বাধা দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা দেখছি না।”