নারায়ণগঞ্জবাসীকে স্তব্ধ করতেই ত্বকী হত্যা: মেয়র আইভী

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে শুধু ত্বকীর বাবাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য নয়, সমগ্র নারায়ণগঞ্জবাসীকে স্তব্ধ করে রাখার জন্য।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2018, 06:11 PM
Updated : 7 March 2018, 06:44 PM

নারায়ণগঞ্জের শিশু তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার পাঁচ বছর পূর্তিতে শহরের জিমখানা লেক মঞ্চে বুধবার বিকালে এক শিশু সমাবেশে তিনি বলেন, “যেসব পদ্ধতি ঘাতকরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছিল, তারই ধারাবাহিকতায় ত্বকীকে হত্যা করা হয়।”

২০১৩ সালের ৬ মার্চ শহরের শায়েস্তা খান সড়কের বাসা থেকে বের হয়ে ত্বকী নিখোঁজ হয়। এর দুই দিন পর শহরের চারার গোপ এলাকায় কুমুদিনী খালে তার লাশ মেলে। ত্বকী নারায়ণগঞ্জ শহরের এবিসি স্কুলের ‘এ’ লেভেল শিক্ষার্থী ছিল।

হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তার বাবা রফিউর রাব্বি বিচার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

মেয়র আইভী বলেন, “ত্বকীর আগেও বহু হত্যাকাণ্ড নারায়ণগঞ্জে ঘটানো হয়েছে। কিন্তু এভাবে কেউ আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারেনি। ত্বকী যে প্রতিবাদের একটি নাম হয়ে দাঁড়াবে, ঘাতকরা তা কখনও চিন্তাও করতে পারেনি। ত্বকী শুধু নারায়ণগঞ্জের ত্বকী নয়, সমগ্র বাংলাদেশের ত্বকী নয়, পৃথিবীর আনাচে-কানাচে যেখানে বাঙালি আছে, সেখানেই ত্বকী আছে।

“দলমতনির্বিশেষে সবাই এই হত্যাকাণ্ডকে ঘৃণা করে, প্রতিবাদ করে। আমরা শুধু ত্বকী না; চঞ্চল, মিঠু, ভুলুসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। ওসমান পরিবার দ্বারা সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। বিচার হতেই হবে। প্রশাসনকে ব্যবহার করে ঘাতকরা হেন কোনো কাজ নেই যা ঘটায় নাই।”

ত্বকী হত্যার পর তার বাবাসহ যারা প্রতিবাদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের সবাইকে নানাভাবে ঘাতকরা হেনস্তা করেছে বলে দাবি করেন মেয়র আইভী।

তিনি বলেন, “ত্বকী হত্যাকাণ্ডের জন্য আমার পরিবারের পাঁচজনকে ডিবি দিয়ে ধরিয়ে নিয়ে নির্যাতনের পর দেড় মাস করে জেল খাটানো হয়েছিল। অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছিল এই কারণে, আমি যাতে এই হত্যাকাণ্ডের আন্দোলন থেকে সরে যাই।

“গত ৪০ বছরে যে শহরের মানুষ কথা বলেনি, এখন অনেকেই কথা বলছেন এবং প্রতিবাদ করছেন। প্রতিবাদের কারণে অন্যায় কিছুটা হলেও কমে এসেছে। নারায়ণগঞ্জের যেখানেই অন্যায় হবে, এর প্রতিবাদ আমরা সমশ্বরে করব।”

আওয়ামী লীগ নেতা আইভী বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, সাত খুনসহ দেশের অন্যান্য স্থানে খুনের বিচার করে আপনি যেভাবে প্রশংসিত হয়েছেন, ঠিক সেভাবে আমাদের সন্তান ত্বকী হত্যার বিচার করবেন। আমার দৃঢ়বিশ্বাস, বিচার আপনি অবশ্যই করবেন। ত্বকী হত্যার বিচার শুধু নারায়ণগঞ্জবাসীর চাহিদা না, সারা বাংলাদেশের চাহিদা।”

অনুষ্ঠানে আসা শিশুদের মায়েদের উদ্দেশে আইভী বলেন, “আপনারা কখনোই ভয় পাবেন না। সন্তানকে সাহসী করে তুলবেন। নিজেরো সাহসী হবেন। ত্বকী হত্যার ন্যায় বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা প্রতিবাদ করে যাব।”

হকার ইস্যুতে হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “গত ১৬ জানুয়ারি নগরীতে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা করছিলাম। সেখানে পিস্তল উঁচিয়ে একজন মেয়রসহ নিরীহ মানুষকে হত্যার জন্য হামলা চালানো হলো। আধাঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে থাকলাম, প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা পেলাম না।

“সাধারণ মানুষ যেভাবে আমাকে বাঁচাল—এই শহরের মানুষ যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিল, এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এত বড় গুণ্ড নিয়াজুলের অস্ত্র যখন মানুষ খালি হাতে ধরে ফেলে, এর চেয়ে বড় ব্যাপার আর হতে পারে না। ওই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কিভাবে আক্রমণ করা হলো—এটাও তাদের আরেকটি কৌশল।”

তিনি বলেন, “ওই আক্রমণ থেকে যদি তারা আমাকেসহ আরও কয়েকজনকে হত্যা করতে পারত তাহলে এই নারায়ণগঞ্জ জেলা আবার স্তদ্ধ হয়ে যেত। এই শহরের মানুষকে জুজুর ভয় দেখিয়ে স্তব্ধ করে রাখার জন্য তারা এটা করে। অনেকেই বুঝে না বুঝে তাদের ফাঁদে পা দেয়।

“মানুষ সাহসী হয়ে উঠেছে, এই সাহস আপনারা ধরে রাখবেন। ওসমানদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমি ঘাতকদের বলব, ওই দিন আর বেশি দূরে নয়, বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন কি দাঁড়াবেন না জানি না। তবে জনতার আদালতে আপনাদের দাঁড়াতে হবেই হবে।”

অনুষ্ঠানে ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, “ত্বকী হত্যার প্রতিবাদ বন্ধ করতে সংস্কৃতিকর্মীদের ওপর বিভিন্নভাবে হামলা ও মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।”

তিনি ত্বকী হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করেন।

শিশু সমাবেশে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়। এতে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্কুলের ৩০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। তিনটি বিভাগে ৩০ জনকে দেওয়া হয় পুরস্কার। পুরস্কার বিতরণ শেষে নিহত ত্বকীর ওপর প্রামাণ্য চিত্র ‘মানুষ হয়ে মরব’ প্রদর্শন করা হয়।