আত্মসাতের ৯২ লাখ টাকা বাজারের ব্যাগ, আলমারিতে

ভূমি অধিগ্রহণের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় গ্রেপ্তার কিশোরগঞ্জে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামানের বাসা থেকে ৯২ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে দুদক।

নিজস্ব প্রতিবেদককিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2018, 08:00 AM
Updated : 7 March 2018, 02:58 PM

দুদকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে কিশোরগঞ্জ শহরের কাতিয়ারচরে সৈয়দুজ্জামানের বাসায় অভিযান চালিয়ে তারা ওই টাকা পান।

“বাড়ির আলমারি, ঘরের সিলিং থেকে ঝুলানো বাজারের ব্যাগসহ বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা অবস্থায় ওই টাকা পাওয়া যায়। এটা ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণে সরকারি তহবিলের আত্মসাত হওয়া টাকার অংশ বলে ধারণা করছি।”

বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সরকারি ক্ষতিপূরণ তহবিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত ১৭ জানুয়ারি পিরোজপুরের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সেতাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সেদিনই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ করা তহবিল থেকে ১৫ কোটি টাকা অন্যদের সঙ্গে যোজসাজশ করে তুলে নেন। এর মধ্যে পাঁচ কোটি টাকা তিনি মেরে দেন এবং বাকি ১০ কোটি টাকার চেক পরে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন আটকে দেয়।

আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, “পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সেতাফুল টাকা আত্মসাতের ঘটনায় কিশোরগঞ্জের জেলা হিসাব রক্ষণ কার্যালয়ের অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামান ও অফিস সহায়ক মো. দুলাল মিয়াসহ আরও কয়েকজনের নাম বলেন।”

মো. সৈয়দুজ্জামান

জবানবন্দির সূত্র ধরে গত ৬ ফেব্রুয়ারি অডিটর সৈয়দুজ্জামান ও পিয়ন দুলাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে দুদক। পরে তারাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।ওই জবানবন্দির ভিত্তিতেই সৈয়দুজ্জামানের বাসায় অভিযান চালানো হয় বলে জানান ওয়াদুদ। 

দুদকের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক নাসিম আনোয়ারের নেতৃত্বে ওই অভিযানের সময় সহকারী পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম ও মো. ফজলুল বারীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুদকের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ‘আত্মসাতের’ ঘটনার এত বেশি টাকা একসঙ্গে উদ্ধার হল। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে আদালতের অনুমতি নিয়ে ওই অর্থ সরকারি কোষাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।  

দুদক কর্মকর্তারা জানান, ২০১৬ সালের নভেম্বরে কিশোরগঞ্জ জেলায় ‘হাওর এলাকার বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্পের’ জন্য ১৪০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করতে অনুমোদনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়, যা এখন পর্যন্ত অনুমোদন পায়নি।

কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে তা দেখিয়ে সেতাফুল ইসলাম ওই অর্থ হস্তান্তর করতে জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাকে অনুরোধ জানান। এরপর হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা চেক পাস করে কিশোরগঞ্জ সোনালী ব্যাংক শাখা ও বাজিতপুর শাখায় পাঠান।

সেতাফুল ওই পাঁচ কোটি টাকা গত ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে কয়েকটি হিসাব নম্বরে ট্রান্সফার ও উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ করা হয় মামলায়।

সেতাফুল ইসলাম ঢাকার ডেমরা থানার পূর্ব ডগাইর এলাকার মো. দেদার আলী মোল্লার ছেলে।