কোটালীপাড়ায় নির্মিত হলো মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ভাস্কর্য

একাত্তরের রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বকে স্মরণে রাখতে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে।

মনোজ সাহা গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2018, 12:06 PM
Updated : 23 Feb 2018, 12:06 PM

শুক্রবার জহরেরকান্দি গ্রামে পূর্ব কোটালীপাড়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ভাস্কর্য উদ্বোধন করেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ও কবি কাজী রোজী।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কাজী রোজী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নিজ নির্বাচনী এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য উদ্বোধন করতে পেরে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি গর্বিত। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চিহ্নগুলি সংরক্ষণের জন্য দেবদুলাল বসু পল্টুর মতো সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারব।”

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রম হেমায়েত বাহিনী গঠন করে জহরেরকান্দি গ্রামের পূর্ব কোটালীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তোলেন। গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল জেলার নারী মুক্তিযোদ্ধাসহ বহু মুক্তিযোদ্ধা এ ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

হেমায়েত উদ্দিনের নেতৃত্বে কোটালীপাড়া উপজেলার রামশীল ইউনিয়নের রাজাপুর, রামশীল, জহরেরকান্দিসহ গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও বরিশালে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তোলেন মুক্তিযোদ্ধারা। 

এসব যুদ্ধে হেমায়েত বাহিনীর ২৮ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। হেমায়েত উদ্দিনসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য হেমায়েত উদ্দিনকে বীর বিক্রম উপাধি দেওয়া হয়। পূর্ব কোটালীপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা তুলে ধরতে কোনো স্মৃতি ভাস্কর্য এর আগে নির্মাণ করা হয়নি।

গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দেবদুলাল বসু পল্টু গত বছর জহরেরকান্দি স্কুলে এই স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করনে। এতে তিনি অর্থ, পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে সহায়তা করেন।

অনুষ্ঠানে দেবদুলাল বসু বলেন, “আগামীর বাংলাদেশ হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী উন্নত, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক। তাই মুক্তিযুদ্ধের অমর অজেয় স্মৃতি ধরে রাখতেই আমি জহরেরকান্দি গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছি।”

এটি পূর্ব কোটালীপাড়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।

নারী মুক্তিযোদ্ধা আশালতা বৈদ্য বলেন, “জহরেরকান্দি ক্যাম্প থেকে আমি প্রশিক্ষণ নিয়েছি। হেমায়েতের নেতৃত্বে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে  যুদ্ধ করেছি। এতদিন মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

“নতুন প্রজন্মের কাছে হেমায়েত বাহিনীর বীরত্ব গাথা তুলে ধরতে দেবদুলাল বসু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন। এ মহান উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।”

পূর্ব কোটালীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বনোজ কুমার মজুমদার বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় অর্জন আমাদের বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মানেই মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশ আর মুক্তিযুদ্ধ একে অপরের পরিপূরক।

“সেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন রক্ষার জন্য আমাদের বিদ্যালয়ে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য উদ্বোধন করা হয়েছে।  এটি আমাদের অনন্য পাওয়া।”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।

পূর্ব কোটালীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বনোজ কান্তি মজুমদারের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা চৌধূরী এমদাদুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এম হুমায়ুন কবির, জেলা পরিষদ সদস্য মাজাহারুল হক পান্না প্রমুখ।