বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের দিনটিতে দুই বাংলার মোহনা বেনাপোলের এই মিলনমেলায় এক সময়ের এক থাকার সুরই যেন বেজে উঠল দুই পারের বাংলাভাষীদের মনে।
বুধবার সকাল থেকেই গান, আবৃত্তি আর দুই বাংলার কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-রাজনীতিবিদ ও সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে বেনাপোল আর পেট্রাপোলের শূন্যরেখা।
অমর একুশের অমর সুরের সঙ্গে মঞ্চ থেকে ভেসে আসা “একই আকাশ, একই বাতাস/এক হৃদয়ে একই তো শ্বাস” গানের সুর যেন বেঁধে রাখে সবাইকে।
উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর ভারত-পাকিস্তান দুই দেশ সৃষ্টি হলে ভাগ হয়ে যায় বাংলা। পাকিস্তানের অংশে থাকা পূর্ব পাকিস্তান ১৯৭১ সালে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ হয়। পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে ভারতের রাজ্য হয়ে।
বেনাপোলের পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ষোড়শ বছরে এসে বড়েছে এ মিলনমেলার পরিধি; তৈরি হয়েছে আস্থা ও ভালোবাসার বন্ধন।
এপার বাংলার বেনাপোল পৌরসভা আর ওপারের বনগাঁ পৌরসভার যৌথ এ আয়োজনে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের রপ্তানি টার্মিনালে তৈরি করা হয় একটি মঞ্চ। আর বেনাপোলের শূন্য রেখা থেকে ২০০ গজ ভেতরে ছিল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একুশে মঞ্চ’। বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীরা সেই মঞ্চে বসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।
কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও কয়েক ঘণ্টার জন্য যেন উধাও হয়ে যায় সীমান্তের কাঁটাতার; দুই বাংলার মানুষ সীমান্তে মিলিত হয় আলিঙ্গনে; মেতে উঠে আড্ডায়-স্মৃতিচারণে।
আগে থেকেই নিজ নিজ ভূখণ্ডে অপেক্ষায় ছিলেন আয়োজকরা। ঘড়িতে যখন সকাল ১০টা ১৫মিনিট, তখন সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে পা রাখেন পশ্চিমবঙ্গের খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, লোকসভার সাংসদ মমতা ঠাকুর, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি রহিমা মণ্ডল, বিধানসভার বিধায়ক বিশ্বজিত দাস, বিধায়ক সুরজিৎ বিশ্বাস, প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণ গোপাল ব্যানার্জি, বনগাঁ পৌরসভার চেয়ারম্যান শংকর আঢ্যসহ ভারতীয় কবি-শিল্পী-সাংবাদিক সাহিত্যিকদের একটি প্রতিনিধিদল।
পরে দুই বাংলার মানুষ নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষ থেকে শূন্যরেখায় নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন।
পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাঙালির অর্জনকে দুই বাংলা একসঙ্গে পালন করছি, এটা খুবই গর্বের বিষয়। দুই দেশের সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও মৈত্রীতে এটা অনুপ্রেরণা যোগাবে।”
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাতেমাতুজ্জোহরা, কিরণ চন্দ্র রায়, ভারতের শিল্পী অনুপম রায়। আবৃত্তি করেন ভারতের লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, বাংলাদেশের অভিনেতা ও আবৃত্তিকার জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ।