পোড়াদহ মেলায় ‘১০০’ কেজির বাঘাড়

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় এবার ১০০ কেজি ওজনের বাঘাড় এসেছে, বিক্রেতা যার দাম হাঁকছেন একলাখ ২০ হাজার টাকা।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2018, 01:53 PM
Updated : 14 Feb 2018, 01:53 PM

শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে গাবতলী উপজেলার গোলাবাড়ী এলাকার পোড়াদহতে প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবারে অনুষ্ঠিত হলেও এবার মেলা বসেছে এক সপ্তাহ পরে।

মেলা উপলক্ষে উপজেলার ঘরে ঘরে জামাই ও আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ জানানো হয়। ঈদসহ অন্যান্য পার্বনে ওই এলাকার লোক যত না খরচ করে তার চেয়ে বেশি খরচ করে এই মেলা উপলক্ষে। মেলা থেকে বড় মাছ এবং বড় বড় মিষ্টি এনে সমাদর করা হয় জামাই ও আত্মীয়দের।

তবে এ বছর মূল অংশে মেলা বসেনি। পোড়াদহ নদীর পাশে স্বল্পপরিসরে এবং দুর্গাহাটা হাইস্কুল মাঠে ও দারিয়াল বাজারের জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট্রের খালি জায়গায় বসেছে মেলা।

মেলার মূল আকর্ষণ মাছ। মেলাতে মূলত মাছ কিনতেই ভিড় জমায় বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মানুষ। এখানে এবারের আকর্ষণ ছিল ১০০ কেজি ওজনের বাঘাড় আর ১০ থেকে ১৫ কেজি ওজনের মিষ্টি।

মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল হাই বলেন, বাঘাড় বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে। তবে ১০০ কেজি ওজনের মাছটি এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে।

“কেউ একা কিনতে না পারলে কয়েকজন মিলে মাছটি কিনবে। ইতোমধ্যেই সাতজন সেই প্রস্তাবটি দিয়েছেন। তবে, কাটতে ঝামেলা তাই অপেক্ষা করছি একজনই কিনে কি না।”

এক কেউ না কিনলে কেটে বিক্রি করবেন বলে জানান তিনি।

মিষ্টি ব্যবসায়ী জয়নাল বলেন, এই মেলায় যে সব দর্শনার্থী আসে তারা অন্যান্য সওদাপাতির সঙ্গে মিষ্টিও কিনে থাকে। এখানে সবচেয়ে বড় মিষ্টি ১৫ কেজির হয়।

প্রতিকেজি মিষ্টি ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।

মেলার ইজারাদার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, মেলাটি ২০০ বছরের পুরাতন। এই মেলায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দর্শনার্থীরা আসছে।

গাবতলী থানার পরিদর্শক নূরুজ্জামান জানান, মেলার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ কাজ করছে। জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট্রের জায়গা খালি থাকায় সেখানেও স্থানীয়রা মেলা বসিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ওয়াজেদ হোসেন জানান,  প্রতিবছরেই মেলার নির্ধারিত স্থানে এলাকার মণ্ডল পরিবার কোনো কিছু চাষ না করে খালি রাখে। ওই পরিবারের কাউকেই মেলাটির ইজারা দেওয়া হয়। গত বছর স্থানীয় মাহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জমির মালিকদের না দিয়ে নিজের নামেই ইজারা নেন।

“সেই কারণে এবার জমির মালিকরা আগে থেকেই সেখানে ইরি-বোরো চাষ করেছেন। ফলে মেলাটি নির্ধারিত স্থানে না হয়ে বিকল্প স্থানে ছোট পরিসরে হচ্ছে।”

স্থান সংকটে মেলা গাবতলীর দুর্গাহাটা হাইস্কুল মাঠ ও দারিয়াল বাজারের জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্টের খালি জায়গাতেও আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান।

মালিয়ান ডাঙ্গা গ্রামের ইদ্রিস আলী বলেন, প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবারে মেলাটি হলেও এবার চেয়ারম্যানের কারণে এক সপ্তাহ পরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুইশ বছরের পুরনো এ মেলা সন্ন্যাসী মেলা নামেও পরিচিত। আগে সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে মেলাটি বসত।

ইজারা নিয়ে জটিলতার কারণে মেলার স্থান পরিবর্তনে আমেজ নষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ছাইহাটা গ্রামের আলমগীর হোসেন বলেন, “মেলা উপলক্ষে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকা থেকে এসেছি।”