নগরের চৌদ্দপায়ায় বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটি এলাকায় কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হকের বাড়িতে শুরু হলো তার ৭৯তম জন্মদিন উদযাপন।
যারা এই আয়োজন করলেন তারা কবিকুঞ্জ, রাজশাহী থিয়েটার, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, উদীচী ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সদস্য।
হাসান আজিজুল হকের ‘উজান’ নামের এই বাড়িটিতে ঢোকার আগে মঞ্চের মতো ছোট একটা জায়গা। সেখানেই টানানো হলো কথাশিল্পীর ছবিসংবলিত একটি ব্যানার। বাড়ির ভেতর থেকে ছোট একটা টেবিল এনে সেখানে রাখা হলো কেক। এত আয়োজন দেখে চমকে গেলেন হাসান আজিজুল হক। তার মেয়ে তো বলেই বসলেন, “আপনারা আসবেন তো একটা খবর দেবেন না!”
বাড়িতে এত মানুষ দেখে খুশি হাসান আজিজুল হক। জন্মদিনে একে একে সবার শুভেচ্ছা গ্রহণ করলেন তিনি। কবিকুঞ্জের পক্ষ থেকে দেওয়া হল একঝুড়ি লাল গোলাপ। শুভেচ্ছা গ্রহণ শেষে সবাইকে নিয়েই কেক কাটলেন হক। সঙ্গে সঙ্গে সবাই গেয়ে উঠলেন, “হে নতুন, দেখা দিক আরবার; জন্মেরও প্রথমও শুভক্ষণ...।”
হাসান আজিজুল হক সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “জীবনে অনেকগুলো দিন মনে থাকবে। তার মধ্যে আজকের দিনটিও মনে থাকবে। ভালো লাগছে। একদিনে এত চেনা মানুষকে একসঙ্গে দেখছি। সবই প্রিয় মুখ। আমার জন্মদিনটা সবার মনে আছে দেখেও ভালো লাগছে। মনে রাখার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা।”
এ সময় সবার পক্ষ থেকে বক্তব্য দিলেন রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহা। তিনি বললেন, “হাসান আজিজুল হকের নামটা এখন শুধু বাংলাদেশেই নয়, দেশের বাইরে সর্বত্র একটা শক্ত পরিচিতি গড়ে উঠেছে। জন্মদিনে তাকে আমরা শুভকামনা জানাই। হাসান আজিজুল হকের সৃষ্টিশীলতা তার জীবনকে আরও পরিপূর্ণ করবে, তাকে এগিয়ে যাওয়ার আরও প্রেরণা দেবে।”
বক্তব্য শেষ হলে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের জেলা শাখার শিল্পীরা একক ও সমবেত কণ্ঠে গান শোনান। কবিকুঞ্জের সভাপতি আরিফুল হক কুমার, সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন প্রামাণিক, উদীচীর সভাপতি আলমগীর মালেক, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর তরুণ কুমার সরকারও ছিলেন সেখানে।
হাসান আজিজুল হকের জন্ম অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার যবগ্রামে ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। তার বাবা মোহাম্মদ দোয়া বখশ্। আর মা জোহরা খাতুন।
ইতহাসের তিন তিনটি অধ্যায়ের সাক্ষী এই লেখক গল্পগ্রন্থ সমুদ্রের স্বপ্ন, শীতের অরণ্য ও উপন্যাস আগুনপাখির জন্য খ্যাতি পেয়েছেন। একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া এই লেখকের ছেলেবেলা কেটেছে আর দশটা সাধারণ ছেলেমেয়ের মতো। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশুনা নিজের গ্রামেই সেরেছেন তিনি। ১৯৫৪ সালে যবগ্রাম মহারানী কাশীশ্বরী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৫৬ সালে খুলনার দৌলতপুরের ব্রজলাল মোহন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন।
রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে দর্শনশাস্ত্রে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত এখানেই দর্শন বিভাগে অধ্যাপনা করেন।