সাংবাদিক শিমুল হত্যা: ১ বছরেও বিচার শুরু হয়নি

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে সমকাল সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যার এক বছর পরও বিচার শুরু হয়নি।

ইসরাইল হোসেন বাবু সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2018, 11:49 AM
Updated : 2 Feb 2018, 02:24 PM

গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুর পৌরসভার ওই সময়ের মেয়র (বর্তমান সাময়িক বরখাস্ত) হালিমুল হক মিরুর বাড়িতে হামলার সময় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে পেশাগত দায়িত্ব পালনরত শিমুল গুলিবিদ্ধ হন; পরদিন তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় তিনটি পক্ষ থেকে তিনটি মামলা হয়। 

সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার খাতুন বাদী হয়ে মেয়র মিরুসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। প্রায় একই আসামিদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন ছাত্রলীগ নেতা বিজয় মাহমুদের চাচা এরশাদ আলী।

ঘটনার দুই মাস পর মিরুর স্ত্রী লুৎফুননেছা পিয়ারী বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা করেন। এ মামলায় ১৯ আসামির মধ্যে রয়েছেন শাহজাদপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র নাসির উদ্দিন, পৌর আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম, আমিরুল ইসলাম সাহু, ছাত্রলীগ নেতা শেখ কাজল, স্থানীয় সাংসদ হাসিবুর রহমান স্বপনের ব্যক্তিগত সহকারী আশিকুল হক দিনার, সাংসদের ভাগ্নে মিঠু প্রমুখ।

শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার খাতুনের মামলার আইনজীবী আবুল কাশেম মিয়া জানান, আগামী ১০ এপ্রিল মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন রয়েছে।

স্থানীয়দের ভাষ্য, পূর্ব বিরোধের জেরে মিরুর ভাই হাফিজুল হক পিন্টুর নেতৃত্বে ২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ছাত্রলীগ নেতা বিজয় মাহমুদকে ধরে নিয়ে মেয়রের বাড়িতে আটকে রেখে মারপিট করে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগের একটি অংশ মহাসড়ক অবরোধ করে এবং অবরোধকারীদের একটি অংশ মেয়রের বাড়িতে হামলা করতে যায়।  এক পর্যায়ে মেয়রের বাড়ির অদূরে দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়।

সংঘর্ষের মধ্যে সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুলের মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়। পরদিন (৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

ওই সময় মিরু বলেছিলেন, হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তার লাইসেন্সকৃত শটগান থেকে তিনি বাড়ির ভিতর থেকে একটি গুলি করেছিলেন।

সংঘর্ষের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়- মিরু তার বাড়ির সামনে অস্ত্র হাতে পায়চারি করছেন। আর সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত সাংবাদিক শিমুলকে উদ্ধার করে নিরাপদে নিয়ে যাচ্ছে অন্যরা।

শিমুলের স্ত্রী ও ছাত্রলীগ নেতা বিজয়ের চাচার মামলায় মেয়র মিরু এখন জেলহাজতে রয়েছেন। তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত এবং আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

শাহজাদপুর থানার ওসি গোলাম কিবরিয়া জানান, শিমুলের স্ত্রী ও বিজয়ের বাবার মামলায় ২৯ আসামি জামিনে রয়েছেন; পলাতক রয়েছেন আট জন।

পুলিশ এজাহারভুক্ত ১৮ জনসহ মোট ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দুইটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছে বলে তিনি জানান।

হামলার সময় গুলিতে আহত হয়েছিলেন মামলার দুই সাক্ষী জহির ও শাহেব আলী।

শাহেব আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেয়রের বাড়িতে হামলার সময় সাংবাদিক শিমুল ছাড়াও আমরা চার জন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলাম। আমাদের শরীরে এখনও স্প্লিন্টার রয়েছে। আমাদের শরীরে থাকা স্প্লিন্টার আর শিমুরের মাথা থেকে পাওয়া স্প্লিন্টার মিলালেই প্রমাণ মিলবে কার গুলিতে শিমুলের মৃত্যু হয়েছে।”

বাদীর আইনজীবী মো. আবুল কাশেম মিয়া বলেন, “উদ্ধার হওয়া অস্ত্র দিয়েই শিমুলকে গুলি করা হয়েছে। এখানে অভিযুক্তদের পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”

শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি বিমল কুমারসহ স্থানীয় সাংবাদিকের ভাষ্য, ঘটনার সময় বেশ কয়েকটি অস্ত্র ব্যবহৃত হলেও পুলিশ বৈধ ও অবৈধ মিলে মাত্র দুইটি অস্ত্র উদ্ধার করতে পেরেছে। এছাড়া ঘটনার সময় সাংবাদিক শিমুলের ব্যবহৃত ক্যামেরা এবং মোবাইল এখনও উদ্ধার করা যায়নি।

শিমুলের মামাত ভাই আবুল কালাম আজাদসহ স্বজনদের ভাষ্য, মামলাটি প্রথম থেকেই দ্রুত বিচার আইনে নেয়ার দাবি থাকলেও তা রয়ে গেছে সাধারণ আদালতেই।

জামিনে মুক্ত মিরুর ভাই হাফিজুল হক পিন্টু বলেন, “ঢাকায় ফরেনসিক ল্যাবরেটরির ব্যালিস্টিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে শিমুলের মাথায় পাওয়া সিসার বলের ওজন ০.৫০ গ্রাম। আর মিরুর শটগানের কার্তুজের ওজন ০.৫৩ গ্রাম।”

এ ব্যাপারে ওসি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ঘটনার পরই মিরুর লাইসেন্সকৃত শটগান ও গুলি জব্দ এবং তার ভাই মিন্টুর তথ্যমতে একটি পাইপগান উদ্ধার করা হয়। এর বাইরে আর কোনো অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছিল কিনা তা তিনি জানেন না।