আর এই সময়ে বাঘের হামলায় ২৬৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে বন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বাঘ রক্ষায় নয় বছর আগে সরকার একটি প্রকল্প নিলেও তাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসেনি। প্রকৃতি বদলের সঙ্গে সঙ্গে লোকালয়ে বাঘ আসা বেড়েছে, মানুষের হাতে সংরক্ষিত এ প্রাণীর মৃত্যুও থামছে না।
২০১৫ সালের বাঘশুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘ রয়েছে ১০৬টি।
এর মধ্যে মঙ্গলবার সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার গুলিশাখালী গ্রামে প্রায় আড়াই বছরের একটি বাঘ শাবক এলাকায় ঢুকে পড়লে সেটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
নথি ঘেঁটে সুন্দরবনে দায়িত্বরত বন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০০১ সাল থেকে যে ৩৫টি বাঘ মারা গেছে তার মধ্যে পূর্ব বিভাগে ২০টি এবং পশ্চিম বিভাগে ১৫টি বাঘের মৃত্যু হয়।
পশ্চিম বিভাগের বন কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন বলেন, এই সময়ে পশ্চিম বিভাগে মোট ১৫টি বাঘের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় পিটুনিতে মারা যায় আটটি।
সুন্দরবন বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা মো. মদিনুল আহসান বলছেন, বাঘের মৃত্যুর এই হার আগের তুলনায় কম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকার ২০০৯ সালে বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান প্রকল্প হাতে নেয়। এর আওতায় বাঘ রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি, বাঘের হামলা থেকে জানমাল ও মানুষের হাত থেকে লোকালয়ে আসা বাঘ রক্ষায় ৮৯টি টাইগার রেসপন্স টিম গঠন করা হয়।
“এই কার্যক্রম শুরুর পর থেকে গত ১০ বছরে মাত্র নয়টি বাঘ মানুষের হাতে মারা পড়েছে। তুলনা করলে এখন আগের তুলনায় বাঘ কম মারা পড়ছে। লোকালয়ে বাঘ ঢুকে পড়লে তা রক্ষায় ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম কাজ করে থাকে।”
বলেশ্বর ও পশুর নদীর বিভিন্ন জায়গায় পলি জমে নদী মরে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “পানি কমে যাওয়ায় বাঘ লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। নদীখননে প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। প্রকল্প অনুমোদন পেলে বাঘ লোকালয়ে আসতে পারবে না।”
পৃথিবীতে এখন ছয় প্রজাতির বাঘ টিকে আছে জানিয়ে এই বন কর্মকর্তা বলেন, তার মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার অন্যতম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ একক ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট হিসেবে সুন্দরবনে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাঘ বসবাস করে।
তিনি বলেন, একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘের ওজন সর্বোচ্চ ২২০ কেজি। আর বাঘিনীর ওজন সর্বোচ্চ ১৬০ কেজি। প্রাকৃতিক পরিবেশে এরা ১০ থেকে ১৪ বছর বাঁচে। দুই বছর পরপর একসঙ্গে দুই-তিনটি বাচ্চা দেয়। বাচ্চারা মায়ের সঙ্গে থাকে দুই বছর। এই সময় বাঘিনী পুরুষ বাঘের সঙ্গ এড়িয়ে চলে। পুরুষ বাঘ শাবকের ওপর হামলা করে।
পূর্ব বিভাগের বন কর্মকর্তা মাহমুদুল জানান, তার এলাকায় বিভিন্ন সময় বাঘের আক্রমণে এক নারীসহ মোট ২৬ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ময়না নামে মংলা উপজেলার জয়মনি এলাকার এক বৃদ্ধ ছাড়া বাকি সবাই বনজীবী।
“নিহতদের মধ্যে ১৪ জনই বাগেরহাটের সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা উপজেলার। ছয়জন মংলা উপজেলার, একজন রামপাল উপজেলার। অন্য পাঁচজন খুলনার দাকোপ, পাইকগাছা ও বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন।”
এছাড়া এ সময় চারটি পৃথক ঘটনায় বাঘের আক্রমণে একজন বনকর্মীসহ নয়জন আহত হন বলে জানান তিনি।
পশ্চিম বিভাগের বন কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন বলেন, এই এলাকায় বাঘের হামলায় মারা গেছেন ২৩৪ জন নারী-পুরুষ। তাদের অধিকাংশই বনজীবী ও সুন্দরবন সংলগ্ন নদী-খালে চিংড়ি রেণু আহরণকারী।