আখেরি মোনাজাতে শেষ হল বিশ্ব ইজতেমা

দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগতীরে শেষ হয়েছে তাবলিগ জামাতের ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমা।

আবুল হোসেন গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2018, 04:54 AM
Updated : 21 Jan 2018, 01:30 PM

হেদায়েতি বয়ান, ধর্মীয় আলোচনা ও ইবাদতের মধ্য দিয়ে তিনটি দিন কাটানোর পর রোববার বেলা ১০টা ২০ মিনিটে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়।

বাংলা ও আরবি ভাষায় ২৬ মিনিটের এ মোনাজাত পরিচালনা করেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম তাবলিগের শুরা সদস্য মাওলানা জুবায়ের।

মোনাজাতে অতীতের সব ভুলের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের সব মুসলমানের মঙ্গল কামনা করা হয়। মোনাজাত প্রচারের জন্য গণযোগাযোগ অধিদপ্তর ও গাজীপুর জেলা তথ্য অফিস বিশেষ ব্যবস্থা নেয়।

আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে প্রতিবারের মত এবারও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস থেকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপরও বিভিন্ন জেলার হাজারো মুসলমান যানবাহন থেকে নেমে শীতের মধ্যেই পায়ে হেঁটেই রওনা হন টঙ্গীর পথে।

দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভিকে নিয়ে বিতর্ক ও বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে এবার বিশ্ব ইজতেমায় জনসমাগম ছিল অন্যবারের চেয়ে কম। তারপরও আখেরি মোনাজাতের সময় ইজতেমাস্থলের চারপাশের ৩-৪ কিলোমিটার এলাকায় যেন তিল ধারণের জায়গা ছিল না।

মোনাজাতের আগে চলে হেদায়েতি বয়ান। বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন।  আর ভোরে ফজরের নামাজের পর বয়ান করেন মাওলানা রহিম নকিব।

ছবি: দীপু মালাকার

মোনাজাতের আগে ইজতেমা ময়দানে চটের সামিয়ানার নিচে বয়ান শোনে লাখো মানুষ। ময়দানে জায়গা না পেয়ে আশেপাশের অলিগলি ও রাস্তায় পাটি, খবরের কাগজ, পলিথিন বিছিয়ে তাতেই অবস্থান নেন অনেকে।

ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে বহু নারীও এসেছিলেন মোনাজাতে অংশ নিতে। ময়দানে ঢোকার অনুমতি না থাকায় তারা আশপাশের বিভন্ন কারখানা ও আবাসিক ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়ে মোনাজাতে হাত তোলেন।

ইজতেমা ময়দানের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে বসে আখেরি মোনাজাতে যোগ দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত আলী খান।

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ৮০টি দেশের চার হাজারের বেশি বিদেশি এবার ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিয়েছেন।

“ইজতেমার প্রথম পর্বের আগে মাওলানা সাদকে নিয়ে বিতর্কে কিছুটা উত্তেজনা ছিল। তাই উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও দ্বিতীয় পর্বে বেড়েছে।”

ছবি: দীপু মালাকার

আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরাসহ আশপাশের এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কারখানা, বিপণিবিতান ও অফিস এদিন বন্ধ ছিল। মোনাজাত শেষে টঙ্গী থেকে সবার বাড়ি ফেরার সুবিধার্থে ১৯টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে রেল কর্তৃপক্ষ।

অবশ্য তারপরও সবার একসঙ্গে বাড়ি ফেরার তাড়াহুড়ায় টঙ্গীর কামারপাড়া সড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী- কালীগঞ্জ সড়কের আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু ও আশপাশের সড়ক-মহাসড়ক এবং সংযোগ সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় যানজট। ফলে আবারও অনেকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

গত ১২ জানুয়ারি ভোরে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ওই পর্বে অংশ নেন ঢাকাসহ ১8 জেলার মুসলমানরা।

চার দিন বিরতি দিয়ে ঢাকা ছাড়াও আরও ১৩ জেলার মুসলমানদের অংশগ্রহণে গত শুক্রবার শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব, যা রোববার শেষ হল। এর বাইরে দেশের বাকি জেলার মানুষ আগামী বছর দুই পর্বে ইজতেমায় অংশ নেবেন।