বুধবার নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় করা এই অভিযোগে নিয়াজুল তার উপর ‘হামলা চালিয়ে অস্ত্রটি ছিনতাইয়ের জন্য’ মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সমর্থক ১৭ জনকে দায়ী করেছেন।
আইভীর অভিযোগের মুখে থাকা সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান দাবি করেছেন, সেদিন নিয়াজুলের উপর হামলা হলে আত্মরক্ষায় নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল বের করেছিলেন তিনি, তবে কোনো গুলি ছোড়েননি।
নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই নেতা আইভী ও শামীমের পুরনো দ্বন্দ্বের জেরে সিটি করপোরেশনের হকার উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দুজনের সমর্থকদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে রূপ নেয় শহরের চাষাঢ়া এলাকা।
তখন অস্ত্র হাতে নিয়াজুলের ছবি আসে, সেইসঙ্গে তাকে মার খেতেও দেখা যায় ঘটনার ভিডিওচিত্রে।
অস্ত্র হাতে নিয়াজুলের ছবি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, “অস্ত্রধারীদের ভিডিও ফুটেজ দেখে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা কাউকে ছাড়ব না।”
এরপর রাতেই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় নিয়াজুলের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়েরের খবরটি প্রকাশ পায়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “অভিযোগটি জিডি হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করে তদন্ত করছে পুলিশ।”
নিয়াজুল নিজে গিয়ে না কি তার পক্ষে কেউ অভিযোগটি দায়ের করেছেন, সে বিষয়ে পুলিশ মুখ খোলেনি। নিয়াজুলের কোনো খোঁজও তার বাড়ি কিংবা তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মেলেনি।
পুলিশ সুপার বলেন, “অস্ত্রধারী নিয়াজুলকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। তাকে খুঁজছে পুলিশ।”
মঙ্গলবারের ঘটনার পর থেকে মেয়র আইভী পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছেন। তিনি পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহারের দাবিও তুলেছেন।
থানায় দাখিল করা অভিযোগে নিয়াজুল বলেছেন, সেদিন নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে যাওয়ার পথে সায়াম প্লাজা এলাকায় তাকে মারধর করা হয়। তখন তিনি আত্মরক্ষার্থে অস্ত্র বের করলে আসামিরা তাকে পিটুনি দিয়ে তার অস্ত্রটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
অভিযোগে আইভী সমর্থক ঠিকাদার আবু সুফিয়ানসহ ১৭ জনকে আসামি করেছেন নিয়াজুল। তারা কেউ আইভীর আত্মীয়, কেউ কাউন্সিলর, কেউ সমর্থক।
আইভীর অভিযোগ, সেদিন তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই হামলা হয়েছিল, তখন নিয়াজুল অস্ত্র হাতে চড়াও হয়েছিলেন।
অন্যদিকে শামীম বলেন, “তাকে (নিয়াজুলকে) আইভীর প্রিয় বন্ধু সুফিয়ানসহ বিএনপির ক্যাডাররা ধরে তিন দফা মারধর করেছে। চতুর্থ দফায় সে আত্মরক্ষার্থে পিস্তল বের করেছে। কিন্তু কোনো গুলি ছোড়ে নাই। সরকার তাকে অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়েছে তো আত্মরক্ষার্থে।”
নিয়াজুলের পরিচয় তুলে ধরে শামীম বলেন, “নিয়াজুল আওয়ামী লীগের সাহসী নেতা নজরুল ইসলাম সুইটের ছোট ভাই। যে সুইট বিএনপি শাসন আমলে খালেদা জিয়াকে কালো পতাকা দেখিয়েছিল। সুইটকে জেলখানা থেকে বের করে এনে র্যাব দিয়ে রাস্তার উপর গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। নিয়াজুল ভাই হত্যার বিচার পায় নাই। তাদের পরিবারের কেউ রাজনীতিতে নাই। সে বিশাল মার্কেটের মালিক ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।”
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান একটি ছবি দেখিয়ে বলেন, সংঘর্ষের সময় আইভীর সঙ্গে থাকা সুফিয়ান অস্ত্র দেখিয়েছিলেন।