‘গুম’ হওয়া জালালের মামলা নতুন করে বিচার শুরুর নির্দেশ

কিশোরগঞ্জে নয় বছর আগে এক ব্যক্তিকে অপহরণ ও খুনের অভিযোগে মামলা চলার মধ্যেই তিনি আদালতে হাজির হওয়ায় নতুন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2018, 02:38 PM
Updated : 17 Jan 2018, 02:38 PM

কিশোরগঞ্জের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বুধবার এ আদেশ দেন।

জেলার হোসেনপুর উপজেলার লাকুহাটি গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে জালাল উদ্দিন নয় বছর আগে ‘নিখোঁজ’ হলে তার স্ত্রী পাঁচজনের বিরুদ্ধে খুনের পর লাশ গুমের মামলা করেন।

এরই মধ্যে মঙ্গলবার জালাল ফিরে এসে আদালতে বলেন, মানবপাচারকারীরা তাকে নিয়মিত মাদক দিয়ে অজ্ঞাতস্থানে আটকে রেখেছিল। এ কারণে তার স্মৃতিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে মামলার আসামিদের অভিযোগ, তাদের ফাঁসানোর জন্যই জালাল এত দিন আত্মগোপনে ছিলেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আদালত জালালের জবানবন্দি গ্রহণসহ নতুন করে বিচার শুরুর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মুখ্য বিচারিক হাকিমকে আদেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে হোসেনপুর থানার ওসিকে নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

কিশোরগঞ্জের পিপি এ কে এম আমিনুল হক চুন্নু মামলার নথির বরাতে বলেন, ২০০৯ সালের ১০ জুলাই জালালকে খুনের পর লাশ গুম করার অভিযোগ করেন তার স্ত্রী ললিতা বেগম।

তিনি একই এলাকার শংকর বাবু, আসাদ মল্লিক, হিরা মিয়া, তার ভাতিজা রুহুল আমিন ওরফে রঙ্গু ও ভাগনে আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে হোসেনপুর থানায় মামলা করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামিরা জালালকে সৌদি আরব পাঠানোর কথা বলে আড়াই লাখ টাকা নেন। অনেক দিন ঘোরানোর পর তাকে বিদেশ পাঠানোর প্রক্রিয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে ঢাকায় নেন আসামিরা। এরপর থেকে জালাল নিখোঁজ হন।

জালালের বরাতে পিপি আমিনুল বলেন, আসামিরা জালালকে আটক করে রেখে নেশাজাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করেন। এতে তিনি মানসিক ভারসাম্য ও স্মৃতিশক্তি হারান। সম্প্রতি তিনি তাদের কাছ থেকে পালিয়ে যান। অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় ঘুরে বেড়ানোর পর হঠাৎ কিছুটা স্মৃতিশক্তি ফিরে পেয়ে বাড়ি আসেন।

মামলার পর থেকে আসামি শংকর বাবু ও আসাদ মল্লিক পলাতক রয়েছেন। রুহুল আমিন ওরফে রঙ্গু ও হিরা মিয়া তিন বছর পলাতক থাকার পর আদালতে আত্মসমর্পণ করে তিন মাস জেল খাটার পর জামিন পান। অপর আসামি আজহারুল ইসলামও চার মাস জেল খেটে জামিন পান।

আসামি হিরা মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি, আমার ভাতিজা রুহুল ও ভাগ্নে আজহারুল - আমরা মামলার বিষয়বস্তু সম্পর্কে কিছুই জানি না। বাদীর সঙ্গেও আমাদের কোনো বিরোধ নাই।

“আমরা কৃষিকাজসহ ছোটখাটো ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আমাদের হয়রানি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকা ও মামলার খরচ জোগাতে গিয়ে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছি। সেই সঙ্গে সামাজিকভাবে হেয় ও অপমানিত হয়েছি।”

তিনি প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনসহ ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়েছেন।