‘বাতাসোত মোর গাও-পাও কোঁকড়া হইয়ে আইসেছে’

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলা শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নীলফামারীর জনজীবন।

দিনাজপুর প্রতিনিধিনীলফামারী ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2018, 07:54 AM
Updated : 8 Jan 2018, 05:16 PM

সোমবার বেলা সাড়ে ৯টায়ও জেলা শহরের দোকানপাট বন্ধ দেখা গেছে। ঘন কুয়াশার মধ্যে বাসগুলো হেডলাইট জ্বেলে চলাচল করলেও রিকশাগুলোকে দেখা গেছে অলস দাঁড়িয়ে থাকতে।

নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমান বন্দরের আবহাওয়া সহকারী মো. লোকমান হাকিম বলেন, চার দিন ধরে জেলার তাপমাত্রা ৬ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলেও সোমবার সকাল ৬টায় তা নেমে আসে ৩ ডিগ্রিতে।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শীতের কারণে মানুষকে নানা রকম দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে। শীতবস্ত্রের অভাবে কেউ কেউ খড়কুটো জ্বেলে শীত ঠেকানোর চেষ্টা করছে। অনেকে অসুস্থ হয়ে ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে।

টুপামারী ইউনিয়নের সুখধন গ্রামের কৃষিশ্রমিক আয়নুল হক (৫০) বলেন, “মোর জীবনোত এমন ঠাণ্ডা মুই কোনো দিন পাও নাই। যেমন কুয়াশাও পড়িছে তেমনি শিশিরানি বাতাসোত মোর গাও-পাও কোঁকড়া হইয়ে আইসেছে।”

নীলফামারী পৌরশহরের মড়াল সংঘ মোড়ে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৫৫ বছর বয়সী সাহেব আলী।

তিনি বলেন, প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় রাস্তাঘাটে মানুষ বের  হচ্ছে না। যদিও কেউ বের হচ্ছে, তারা রিকশায় উঠছে না। ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে সকাল থেকে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও কোনো যাত্রী পাননি।

সৈয়দপুর শহরের ৬০ বছর বয়সী রমজান আলী খড়কুটো জ্বেলে আগুন পোহাতে পোহাতে বলেন, “আমি গরিব মানুষ। ঠাণ্ডায় কাজে যেতে পারি না। পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছি দুই দিন ধরে।”

সরকার কম্বল বরাদ্দ দিলেও তা যথেষ্ট নয় বলে তাদের বক্তব্যে জানা গেছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এ টি এম আখতারুজ্জামান বলেন, সরকার এ বছর নীলফামারীর জন্য ৪১ হাজার ৯৩৭টি কম্বল বরাদ্দ দিয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ হাজার ৯৩৭টি কম্বল ইতোমধ্যেই বিতরণ করা হয়েছে।

নতুন করে আরও ২০ হাজার কম্বল বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন,  প্রতিটি ইউনিয়নে গড়ে ৭০০ করে কম্বল বিতরণের জন্য দেওয়া হয়েছে।

এদিকে শীতে নীলফামারী সদর হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তাদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি।

সোমবার সকালে সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের রোগী ছয় বছর বয়সী প্রীতমের মা সরস্বতী রানী রায় বলেন, “প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় আমার ছেলেটা সকাল থেকে বমি আর পাতলা পয়খানা করছে। তাই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ডাক্তার জানিয়েছে তার নিউমোনিয়া হয়েছে।”

হাতপাতালটির ২৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, একেকটি বিছানায় চারজন করে শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতালের চিকিৎসক মো. আসাদ আলম বলেন, “ঠাণ্ডায় নিউমোনিয়া, হাঁপানি ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।”

রোববার রাত থেকে সোমবার  সকাল ১০টা পর্যন্ত  ৭৫ জন শিশুরোগী ভর্তি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এরা সবাই নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।

অন্যান্য ওয়ার্ডে শীতজনিত কারণে আক্রান্ত আরও ১৭০ জন শিশু ও বৃদ্ধকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

শীত মোকাবিলায় দিনাজপুরেও কম্বল বিতরণ করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম জানিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে আরও ৮০ হাজার শীতবস্ত্র চেয়ে জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে।”