শীতে জবুথবু জনজীবন

পৌষের শেষভাগে শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় উত্তরের বেশিরভাগ জেলাতেই তাপমাত্রা কমে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ায় জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Jan 2018, 11:23 AM
Updated : 7 Jan 2018, 11:31 AM

হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা ছাড়াও শীতজনিত বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। ভাসমান, ছিন্নমূল ও শ্রমজীবী মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্কুল কলেজে শিক্ষার্থীর উপস্থিতিও কমে গেছে।

রোববার দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা ও চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমেছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধির পাঠানো সংবাদ

দিনাজপুর

দিনাজপুরে রোববার তাপমাত্রা ৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে; যা দেশের সর্বনিম্ন।

দিনাজপুর আবহওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  গত বুধবার থেকে শৈত্য প্রবাহ শুরু হলে তাপমাত্রাও কমতে শুরু করে। শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার যার মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  

গত বছরে দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল বলে জানান তিনি।

হাড় কাঁপানো শীতে মানুষের জীবনধারা যেমন ব্যাহত হচ্ছে; তেমনি ঠাণ্ডায় কাজ করতে না পারায় শ্রমজীবী মানুষজন পড়েছে বিপাকে।

জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সকালের দিকে ঘর থেকে তেমন বের হচ্ছে না মানুষজন। রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত রাস্তা-ঘাট ফাঁকা দেখা গেছে।

পাবনা

পাবনার ঈশ্বরদীতে রোববার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

এটা এবারের মৌসুমে পাবনার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলে ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারভার নাহার বানু জানিয়েছেন। 

এদিকে গত দুই দিনে তাপমাত্রা ক্রমশ কমতে থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পাবনার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক মহাসড়কে দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন।

গ্রামাঞ্চলে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন সাধারণ মানুষ।

এদিকে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশু ও বৃদ্ধদের ভিড় বেড়েছে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে।

পাবনা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ নিতীশ কুমার কুণ্ডু বলেন, হাসপাতালের শিশু বিভাগে ৩৮ বেড থাকলেও রোববার পর্যন্ত প্রায় ১০০ শিশু ভর্তি হয়েছে। এদের বেশিরভাগই নিউমোনিয়া, ব্রঙ্ককাইটিস ও ডায়য়িায় আক্রান্ত। 

রাজশাহী

উত্তরের জনপদ রাজশাহীতে রোববার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে বলে রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান।

আশরাফুল জানান, রোববার রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। শুক্রবার ও শনিবার এই তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি ও ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

এদিকে তীব্র শীতে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষের পাশাপাশি চরম দুর্ভোগে পড়েছে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীও। শীতের কারণে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হারও কমে গেছে।

রাজশাহী নগরের শালবাগান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী নাছিমা জানায়, সকালে কুয়াশার মধ্যে তার স্কুলে যেতে কষ্ট হয়। শীতের কারণে হাত জমে যাচ্ছে। ফলে ভালোভাবে লেখাও যাচ্ছে না।

শিক্ষক আমজাদ হোসেন বলেন, শীতের কারণে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে গেছে।

মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারে তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রিতে নেমে আসায়  প্রচণ্ড শীতে জেলার জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। রাতে বৃষ্টির মতো ঝিরঝির করে কুয়াশা ঝড়ছে। এতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন চা শ্রমিকরা।    

রোববার সকালে শ্রীমঙ্গলের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে ৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বলে আবহাওয়া পর্যবেক্ষক হারুনুর রশিদ জানান।

তিনি বলেন, গত ৩ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলের তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি। ৪ জানুয়ারি তা নেমে আসে ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে। ৫ ও ৬ জানুয়ারি ছিল ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি।

এদিকে, ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। ফলে যাত্রাপথে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হচ্ছে বলে পরিবহন চালকরা জানান।  

শ্যামলী পরিবহনের চালক মো. আদিল বলেন, ঢাকা থেকে মৌলভীবাজার আসতে যেখানে সময় লাগে সাড়ে ৪ ঘণ্টা; এখন সময় লাগছে ৬ থেকে সাড়ে ৬ ঘণ্টা।

আর এ কনকনে শীতের মধ্যেই সকাল ৯টায় কাজে যেতে হচ্ছে জেলার চা শ্রমিকদের। শীত অনুযায়ী তাদের পর্যাপ্ত গরম কাপড় না থাকায় চা শ্রমিকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

শ্রীমঙ্গল বুড়বুড়িয়া চা বাগানের শ্রমিক লক্ষ্মী তাঁতী বলেন, “এই শীত মারাত্মক কষ্টে ফেলেছে। ঘন কুয়াশা, ঠাণ্ডা বাতাসের মধ্যেই কাজে যোগ দিতে হয়েছে। বাগানে এখন পর্যন্ত কোনো শীতবস্ত্র কেউ দেয়নি।”

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবাশশেরুল ইসলাম জানান, সরকারিভাবে প্রত্যেক ইউনিয়ন প্রায় সাড়ে ৩০০ পিস করে কম্বল পেয়েছেন তারা।

পাশাপাশি চা শ্রমিকসহ জেলার নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে বৃত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।