স্কুলছাত্রকে ঝুলিয়ে পেটালেন ‘ছাত্রলীগ নেতা’

চুরির অভিযোগ তুলে লালমনিরহাটে সদ্য প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক ছাত্রকে গাছে ঝুলিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে।

লালমনিরহাট প্রতিনিধিআনিছুর রহমান লাডলা, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2017, 04:02 PM
Updated : 28 Dec 2017, 12:26 PM

বুধবার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা বাজারে এ ঘটনায় ছেলেটির মা থানায় অভিযোগ করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পিটুনির শিকার এমদাদুল হক (১৩) মহিষখোচা ইউনিয়নের বারঘড়িয়া গ্রামের মৃত শফিকুল ইসলামের ছেলে। সে মহিষখোচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবার ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে।

তাকে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

আদিতমারী থানার ওসি হরেশ্বর রায় জানান, এ ঘটনায় এমদাদুলের মা আনজু বেগম বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়, বাবার মৃত্যুর পর এমদাদুল তার বড় বোনের বাড়িতে থেকে লেখাপড়া ও সংসারের খরচ মেটাতে স্কুলের পাশাপাশি মহিষখোচা বাজারের চায়ের দোকান চালায়। প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি যায় এমদাদুল।

পরদিন (বুধবার) সকালে ফোন করে এমদাদুলকে ডেকে নেন মহিষখোচা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক আশিক বাবু। এরপর এমদাদুল কিছু বুঝে ওঠার আগেই আশিক তাকে পার্শ্ববর্তী গ্রামীণ ব্যাংকের পিছনের বাগানে নিয়ে যান অভিযোগে বলা হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, সেখানে হাত ও পা গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করতে থাকেন এবং মঙ্গলবার রাতে তার দোকানের পাশে রাখা বাইসাইকেলটি কোথায় জানতে চান।

কিন্তু এর উত্তর না পেয়ে এমদাদুলকে বেধম মারপিট করে গলায় ছুরি ঠেকিয়ে আশিক বাবু হত্যার হুমকী দেন বলে অভিযোগ করা হয়।

পরে স্থানীয় লোকজন এমদাদুলের আর্ত চিৎকারে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এমদাদুল বলে, ফোন করে ডেকে এনে কিছু বুঝে ওঠার আগে আশিক বাবু তার মাফলার দিয়ে আমাকে হাত পা বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে মারপিট করতে থাকে। যে সাইকেল হারানোর কথা বলেছে, সেই সাইকেলের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।

এমদাদুলের মা আনজু বেগম বলেন, “আমার ছেলে না খেয়ে থাকলেও সে চুরি করতে পারে না। সংসার চালাতে গিয়ে সে লেখাপড়ার পাশাপাশি চা বিক্রি করছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”

মহিষখোচা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন সাদ্দাম বলেন, “ঘটনাটি লোক মুখে শুনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মহিষখোচা হাটের ইজারাদার তমিজার রহমান বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। স্কুল ছাত্রটির মুখে শুনে তাকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।”

আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক সার্জন গোলাম আম্বিয়া আদিল বলেন, “এমদাদুলের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের দাগ রয়েছে। ডান কান ও মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছে। সে আশংকামুক্ত হলেও সেরে উঠতে কিছুটা সময় লাগবে।”

ওসি হরেশ্বর রায় বলেন, এমদাদুলের মা আনজু বেগমের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য আশিকের মোবাইলে কয়েকবার ফোন করলে তিনি ধরেননি।