বিজয় আনন্দ জেলায় জেলায়

নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধশেষে বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি জেলায় জেলায় লাল-সবুজের পতাকার সঙ্গে বেলুন, কবুতর উড়িয়ে স্মরণ করা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2017, 04:40 AM
Updated : 16 Dec 2017, 04:40 AM

প্রায় দুই যুগের পাকিস্তানি শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের যে নতুন রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে, তার ৪৬ বছর পূর্তি উদযাপন করছে বাঙালি। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

ময়মনসিংহ

স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দেওয়া বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু হয় ময়মনসিংহে বিজয় দিবস উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা। শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে দিনটির প্রথম প্রহরে মানুষের ঢল নামে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে স্মৃতিসৌধে।

কারও হাতে ব্যানার, কারও হাতে প্ল্যাকার্ড, কেউ নিয়েছেন পুষ্পস্তবক, কারও বুকের কাছে ধরে রাখা একটিমাত্র গোলাপ, আবার কেউ কেউ হাতে নিয়েছেন স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজ পতাকা। সবাই মিলেছে এক বিজয় উল্লাসে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষের স্রোতে ছিল বিজয়ের আনন্দ আর শহীদদের প্রতি ভালোবাসা।

শুরুতে ৩১ বার তোপধ্বনি দিয়ে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে সকাল সাড়ে ৬টায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান এ সময় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। পরে তিনি সবাইকে জঙ্গিমুক্ত দেশ গড়ার শপথবাক্য পাঠ করান।

ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার জি এম সালেহ উদ্দিন, ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি, জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমান, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আনোয়ার হোসেন, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সদস্যসচিব সেলিম সরকার উপস্থিত ছিলেন।

ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটু কাউন্সিলরদের নিয়ে স্মৃতিসৌধে ফুল দেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামূল আলম ও সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পাঠান ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

জেলা ও মহানগর যুবলীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ, জেলা আইনজীবী সমিতি, ন্যাপ, জাসদ নেতারা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

জেলা বিএনপির সভাপতি মোশারফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ, মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল ইসলাম, আমজাদ আলী, জেলা যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ শতাধিক রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

পুরোটা সময়টা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসা বিভিন্ন সংগঠনের কর্মী, সাধারণ মানুষ শ্লোগানে শ্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত করে রাখেন।

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও সালাম গ্রহণ করা হয়। এছাড়া সম্মিলিত কুচকাওয়াজ ও শারীরিক কসরত প্রদর্শন করে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। 

নোয়াখালী

নোয়াখালীতে বিজয় দিবসে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, জেলা পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, নোয়াখালী প্রেসক্লাব, নোয়াখালী পৌরসভা, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব আলম তালুকদার, পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহে আলম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাম্মেল হক মিলন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিয়া মো. শাহজাহান, যুগ্ম সম্পাদক আবদুল মমিন বিএসসি, শহর  জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নোয়াখালীর সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন কৈশোর প্রমুখ।

চাঁদপুর

যথাযোগ্য মর্যাদায় চাঁদপুরে পালিত হচ্ছে মহান বিজয় দিবস। সকালে অঙ্গীকার পাদদেশে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক , সামাজিক ও সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

এরপর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য দীপু মনি, জেলা প্রশাসক মো. আব্দুর সবুর মণ্ডল, পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ওসমান গনি পাটোয়ারী।

শেরপুর

শেরপুরে প্রত্যূষে ৩১ বার তোপধ্বনি ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দেওয়ার মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান শুরু হয়। জাতীয় সংসদের হুইপ শেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. আতিউর রহমান আতিক, জেলা প্রশাসক মল্লিক আনোয়ার হোসেন, পুলিশ সুপার রফিকুল হাসান গণি, পৌর মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন ফুল দেন।

এছাড়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, শেরপুর প্রেসক্লাব, শেরপুর উপজেলা পরিষদ, শেরপুর পৌরসভা, জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা বিএমএ, বিভিন্ন সরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।

খাগড়াছড়ি

খাগড়াছড়িতে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে মহান বিজয় দিবস।

ভোরে খাগড়াছড়ি সদরের মাইনী ভ্যালিতে শহীদ স্মৃতি ফলকে খাগড়াছড়ি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড, জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলাম, স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ফুল দেন। এরপর সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধ।

স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়া ভোর থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় উপসনালয়ে চলে সমবেত প্রার্থনা।

ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে জেলা সদরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।

বিজয় দিবসে খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, প্রধান সড়ক রঙিন সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। ব্যানান প্ল্যাকার্ডে ছেয়ে গেছে পুরো শহর। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়ে আর প্রবীণ মুক্তিযোদ্বাদের পদচারণায় মুখরিত পার্বত্য জনপদ।

রঙিন সাজে পাহাড়ি নারী-পুরুষেরা মিলছে বিজয়ের আনন্দে।

খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে সরকারিভাবে বিজয় দিবসের কর্মসূচিতে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়।

জামালপুর

যথাযোগ্য মর্যাদায় জামালপুরে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে। দিনটির সূচনায় সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে জামালপুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সংসদ সদস্য মো. রেজাউল করিম হীরা, জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন।

এরপর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা বিএনপি, জামালপুর প্রেসক্লাব, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জামালপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোরদের কুচকাওয়াজ, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। 

বাগেরহাট

বাগেরহাটে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। শনিবার সকালে বাগেরহাট শহরের দশানী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিনটির শুভসূচনা হয়। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংষ্কৃতিক সংগঠন শহীদদের ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

পরে বাগেরহাট হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হয়। কুচকাওয়াজ, শরীর চর্চা ও ডিসপ্লে, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

দিনাজপুর

বিজয় দিবসের প্রত্যূষে দিনাজপুরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম।

ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে প্রথমে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান।

এর পরই হুইপ ইকবালুর রহিম পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এছাড়া সেখানে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন হুইপ।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে মন্ত্রী ও হুইপের পর জেলা প্রশাসনের পক্ষে জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে পুলিশ সুপার হামিদুল আলম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।

এরপর পর্যায়ক্রমে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, দিনাজপুর জেলা পরিষদ, দিনাজপুর প্রেসক্লাব, দিনাজপুর সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন সর্বস্তরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।