গদখালির ফুলচাষির মুখে হাসি 

আসন্ন বিজয় দিবস ও ইংরেজি নববর্ষে যশোরের গদখালীতে কয়েক কোটি টাকার ফুল কেনাবেচা হবে বলে আশা করছেন ফুল ব্যবসায়ীরা।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2017, 01:10 PM
Updated : 15 Dec 2017, 01:10 PM

গদখালি ফুলচাষি কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রনি আহম্মদ বলেন, গত বছর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস ও নববর্ষে পাঁচ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হলেও এবার আরও বেশি হবে।

এবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পর্যন্ত এ বাজারে পাঁচ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে বলে তার ভাষ্য।

সূর্য ওঠার আগেই প্রতিদিন চাষি, পাইকার, মজুরের হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠছে যশোর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে গদখালীর বাজার।

দূরদূরান্ত থেকে ফুল কিনতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আসছেন। সকাল থেকেই বিভিন্ন রুটের বাসের ছাদে স্তূপ করে ফুল সাজানো হচ্ছে, পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে ট্রাক-পিকআপ ভ্যান ভরে ফুল যাচ্ছে।

এবার ফুলের বিক্রিবাট্টা দশ কোটি টাকা ছাড়াবে বলে আশা করছেন গদখালীর ফুলচাষি ‘বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির’ সভাপতি আব্দুর রহিম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার দাম ও বেচাকেনা দুটোই ভালো হওয়ায় আমরা দারুণ খুশি। ফুলের উৎপাদন, চাহিদা ও দাম সবই বেশি হওয়ায় এ অঞ্চলের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের মুখে এখন হাসির ঝিলিক।

“গত কয়েকদিন ধরে সারাদেশের পাইকাররা ভিড় করছে এখানকার বাজারে। প্রতিদিন গড়ে অর্ধকোটি টাকার উপর ফুল বিকিকিনি হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “দেশে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস ও নববর্ষের উৎসবে যে ফুল বেচাকেনা হয় তার অন্তত ৭৫ ভাগ যশোরে উৎপাদিত হয়।”

ঝিকরগাছার পানিসারা গ্রামের রফিকুল ইসলাম ২০ বছর ধরে ফুল চাষ করছেন। তিনি এবার ১২ বিঘা জমিতে গোলাপ, জবা, রজনীগন্ধা, গ্ল্যাডিওলাস ফুলের পাশাপাশি ইউরোপের অপূর্ব জারবেরা ফুলেরও চাষ করেছেন।

আবহাওয়া ভালো থাকায় বাগানে আগের চেয়ে বেশি ফুল এসেছে। ফুল বেচে পাঁচ-ছয় লাখ টাকা ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা তার।

মাটিকোমরা গ্রামের নূর হোসেন বলেন, “দুদিনে আমি এক লাখ টাকার জারবেরা বিক্রি করেছি।”

বিদেশি এই ফুল খুব কম জমিতেই চাষ হয়েছে বলে জানালেন ফুলচাষি নূর হোসেন।

ঝিকরগাছার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাইদুল ইসলাম জানান, এই এলাকার ছয় হাজার কৃষক ফুলচাষের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আবহাওয়া ভালো থাকায় ফুলের উৎপাদনও বেশি হয়েছে।”

এবার প্রতিবিঘা থেকে ফুলচাষিরা গড়ে ৭০-৮০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।

ঝিকরগাছার কাগমারী গ্রামের শাখাওয়াত হোসেন দুদিনে প্রায় লাখ টাকার গোলাপ ও গাঁদা বিক্রি করেছেন। আর পটুয়াপাড়ার সাহেব আলী শুধু বৃহস্পতিবারই বিক্রি করেছেন ৪০ হাজার টাকার লাল গোলাপ।

ঝিকরগাছার গদখালি গ্রামের চাষি মনিরুল ইসলাম জানান, গত তিনদিনে তিনি দুই লাখ টাকার জারবেরা, গ্ল্যাডিওলাস, গোলাপ ও গাঁদা বেচেছেন।

শুক্রবার গদখালী বাজারে ফুল ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, “এবার বাইরে ফুলের চাহিদা অন্য যে কোনো সময়ের চাইতে বেশি হওয়ায় ফুলের বাজার খুব চড়া। অন্য সময় এক হাজার গাঁদা ফুল ৩০০/৩৫০ টাকায় কিনতে পারলেও আজ কিনতে হলো ৬০০টাকা দরে।”

শুক্রবার গদখালী বাজারে দেখা গেছে জারবেরার স্টিক বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকায়, রজনীগন্ধা ২-৩ টাকায়, গোলাপ ১০-১৫ টাকায়, রং ভেদে গ্ল্যাডিওলাস ৩- ১০ টাকায়, এক হাজার গাঁদা মিলছে ৫৫০-৬০০ টাকায়।