কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কলেজছাত্রকে পেটানোর অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে এক কলেজছাত্রকে তুলে নিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে।

মজিবুল হক পলাশ, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2017, 12:20 PM
Updated : 14 Dec 2017, 12:20 PM

গত সোমবার রাতে নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর রসুলপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

আহত শিহাব হোসেন শোভনকে (১৯) স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শোভন এবছর রাজধানীর কবি নজরুল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন।

যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই কাউন্সিলর শাহ্জালাল বাদল আলোচিত সাত খুন মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত নূর হোসনের ভাতিজা।

এলাকায় ইন্টারনেট ব্যবসায়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এ ঘটনা ঘটে বলে নির্যাতনের শিকার শিহাব হোসেন শোভনের ভাষ্য। 

শোভন সাংবাদিকদের বলেন,  তার বড় ভাই সাখাওয়াত হোসেন সুজন তাদের বাড়ির এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা করেন। কিছুদিন আগে একটি ট্রাক চলার সময় একটি তার ছিঁড়ে যায়।

“গত সোমবার ওই তার মেরামত করতে মেকানিক নিয়ে সেখানে গেলে ৪/৫টি মোটরসাইকেল ও কয়েকটি রিকশাযোগে আসা ১৫/১৬ জন লোক আমাকে এবং মিস্ত্রী রিয়াজ ও অচিন্তকে তুলে নিয়ে যায়।

“পরে তারা আমাদেরকে কাউন্সিলর শাজজালাল বাদলের নয়া আঁটি রসুলবাগ বটতলার বাড়ির নিচতলার কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এরপর ইন্টারনেটের তার চুরির অপবাদ তুলে আমাকে লোহার পাইপ ও লাঠি দিয়ে পিটুনিসহ কিল ঘুঁষি লাথি মারতে শুরু করে।”

শোভন বলেন, মারধরের এক পর্যায়ে তিনি আচেতন হয়ে যান এবং পরে জ্ঞান ফিরলে দ্বিতীয় দফায় আবার পেটায়। কিছুক্ষণ পর বাড়ির উপর থেকে কাউন্সিলর শাহ্জালাল বাদল নিচে নেমে এলে আবার মারধর করে। এরপর অফিসের মেঝেতে ফেলে রাখে।  

শোভনের বাবা ইউসুফ হোসেন বলেন, ছেলেকে ধরে নেওয়ার খবর পেয়ে এক সহকর্মীকে নিয়ে রাত ৯টার দিকে বাদলের কার্যালয়ে যান। সেখানে ছেলের চিৎকারের শব্দ শুনে ভেতরে ঢুকতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়া হয়।

পরে তিনি চিৎকার করলে লোকজন জমা হওয়ারপর তাকে ভেতরে ঢুকতে দেয় বলে ইউসুফের ভাষ্য।

“বিতরে গিয়ে দেখি আমার ছেলেসহ তিনজনকে কাউন্সিলর বাদলের লোকজন ঘিরে রেখেছে। আমার ছেলেকে কেন ধরে এনে মারধর করা হয়েছে জিজ্ঞেসস করলে বাদল বলেন- ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।”

শোভনের বড় ভাই সাখাওয়াত হোসেন সুজন বলেন, তিনি ২০১৬ সালে উত্তর রসুলবাগ এলাকায় রয়েল বিডি নামে ইন্টারনেট সংযোগ লাইনের ব্যবসা শুরু করেন। প্রায় চার পাঁচ মাস আগে কাউন্সিলর বাদলের লোক হিসেবে পরিচিত আবুল হাসনাত ও নাঈম আহমেদ গিয়ে তাকে ইন্টারনেট ব্যবসা বন্ধ করতে বলে এবং তারা ব্যবসা করবে বলে জানায়।

“তার এক সপ্তাহ পর হাসনাত ও নাঈমের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী আমার ইন্টারনেট লাইন সংযোগ কেটে দেয় এবং এমসি ও সুইচ খুলে নেয়।পরে তারা আমার টানা লাইন দিয়ে তারা ব্যবসা শুরু করে এবং এরপর থেকে ওই ব্যবসা তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে।”

অভিযোগের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর শাহ্জালাল বাদলের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

তবে বাদলের কর্মচারী নাঈম আহমেদ বলেন, তিনি কাউন্সিলর বাদলের ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসা দেখাশোনা করেন। শোভনকে মারধরের ঘটনার দিন তারা দুইজনই (তিনি ও বাদল) ঢাকায় ছিলেন।

শোভনকে এলাকার ভাল ছোট ভাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা এলাকায় থাকলে সেদিন এই ঘটনা ঘটত না।

এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুস সাত্তার বলেন, “লোকমুখে ঘটনাটি শুনেছি; কিন্তু কেউ এখনও থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযুক্তরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

জেলার পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না। কেউ অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।