বাড়ি ঢুকে বিবস্ত্র করে ৩ ঘণ্টা ধরে নির্যাতন, ভিডিও প্রচার

অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে যশোরের  মনিরামপুর উপজেলায় এক কলেজছাত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালিয়ে তার ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে; এ ঘটনায় পুলিশ চারজনকে আটক করেছে।

যশোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2017, 09:30 AM
Updated : 24 Nov 2017, 09:31 AM

এছাড়া পরিবারের বৃদ্ধ সদস্যসহ কয়েকজনকে মারধর করে স্ট্যাম্পে সই নেওয়ার অভিযোগ করেছে পরিবারটি।

নেহালপুর পুলিশ ক্যাম্পের এসআই খাইরুল বাসার বলেন, এ ঘটনায় ভিডিও উদ্ধারসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে।

আটককৃতরা হলেন - উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের আজহারুল, রাজ্জাক, নাসির ও হেলাল। তাদের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

মনোহরপুর গ্রামের নূর ইসলাম নামে এক যুবকের ‘অনৈতিক প্রস্তাব’ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তিনি ১০-১২ জন লোক ভাড়া করে এনে গত ১৬ নভেম্বর এই হামলা চালান বলে একাদশ শ্রেণির এই ছাত্রীর অভিযোগ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, নিজেদের ঘরে বসে তিনি তার বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় তার মা পাশের ঘরে ছিলেন।

“রাত ৯টায় তারা আমার ঘরে ঢুকে ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করে। তারা আমাকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কামড়ানোসহ নানাভাবে যৌননির্যাতন চালিয়ে আহত করে।”

তাকে তার মা আগলে ধরার চেষ্টা করলে তাকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে আবার নির্যাতন করা হয় বলে তার অভিযোগ।

কলেজছাত্রী বলেন, “আমরা কথা বলার সময় এলাকার নূর ইসলাম,  তার ছোট ভাই হেলাল মোল্যা, হেলাল বিশ্বাস, বাবুল, বাচ্চু, মামুন, আজহারুল ও রাজ্জাকসহ ১০-১২ জন এসে দরজা খুলতে বলে।

“দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে সবাই ঘরে ঢুকে তারা আমার বন্ধুকে মারধর শুরু করে। আর আমাকে খাটের ওপর ফেলে দিয়ে দুই-তিনজন আমার গায়ের ওপর উঠে পড়ে। তারা টেনে-হিঁচড়ে জামা-কাপড় ছিঁড়ে বিবস্ত্র করে আমাকে কামড়াতে থাকে আর গালিগালাজ করে, মারধর করে। মা এগিয়ে এলে ওরা মায়ের মাথা দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা দেয়। পুরো ঘটনাটা তারা ভিডিও করে।”

কলেজে আসা-যাওয়ার পথে নূর ইসলাম তাকে উত্ত্যক্ত করতেন দাবি করে কলেজছাত্রী বলেন, “নূর ইসলাম আমাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিত। রাজি না হওয়ায় সে হুমকি দিত। নির্যাতনের সময় নূর ইসলাম বলেছিল, সহযোগীদের নাকি সে এক লাখ টাকা দিয়ে ভাড়া করে এনেছে।”

তার মা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি মেয়েকে আগলে রাখার চেষ্টা করলে তারা তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। মেয়েকে তারা ওই ছেলেটির কোলে বসিয়ে জোর করে ভিডিও করে। মেয়ে রাজি না হওয়ায় তারা তাকে মারধর করে। এভাবে চলে রাত ১২টা পর্যন্ত।

“আমাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে ওদের থামতে বললে তাদের একজনকে মেরে রাস্তায় বের করে দেয়। পরে পুলিশ আসলে ওরা চলে যায়।”

পুলিশ এসে কলেজছাত্রী ও তার বন্ধুকে নেহালপুর ক্যাম্পে নিয়ে যায়।

মায়ের অভিযোগ, “পুলিশ যাওয়ার পর আজহারুল, রাজ্জাক, নাসির ও হেলাল এসে জোর করে স্ট্যাম্পে সই নিয়ে বাড়ি থেকে নেমে যেতে যেতে হুমকি দেয়।”

পুলিশ চারজনকে ধরলেও বাকিরা প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে জানিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, “ওই চারজন ছাড়া পেয়ে বাড়ি এসে দেখে নেবে বলে তারা হুমকি দিচ্ছে।

মনোহরপুর কারিগরি ও বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান বলেন, “এই নির্মম ঘটনার অবশ্যই বিচার হওয়া দরকার।”

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই খাইরুল বলেন, এ ঘটনায় আটক চারজনসহ অজ্ঞাত আরও দুই-তিনজনকে আসামি করে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা নিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের আটকের চেষ্টা করছে পুলিশ।

নূর ইসলামকে কেন আসামি করা হয়নি এ বিষয়ে পুলিশ বা পরিবারের সদস্যরা কিছু বলতে পারেননি।