ইকবাল সোবহানের উসকানিতে আরজুর মিথ্যাচার: ফেনী আ. লীগ

খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে আজহারুল হক আরজুর সংবাদ সম্মেলনের পেছনে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করেছে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগ।

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2017, 03:52 PM
Updated : 22 Nov 2017, 04:03 PM

বুধবার ফেনীতে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বিকম এই দাবি করে বলেন, এটা সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ।

এদিকে খালেদা জিয়ার জেলায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের এই অভিযোগকে ‘মিথ্যাচার’ আখ্যায়িত করে ইকবাল সোবহান বলেছেন, স্থানীয় দলাদলিতে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। 

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে যাওয়ার পথে গত ২৮ অক্টোবর ফেনীতে হামলার মুখে পড়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহর।

তাতে ইকবাল সোবহান চৌধুরী মালিকানাধীন ডিবিসি নিউজসহ গণমাধ্যমের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর হয়। কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী মারধরেরও শিকার হন।

বিএনপি নেতারা হামলার জন্য ক্ষমতাসীনদের দায়ী করে এলেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তখন বলেছিলেন, সংবাদপত্রে ‘বিগ নিউজ’ পাওয়ার জন্য তা বিএনপি সাজিয়েছিল।

এরমধ্যেই মঙ্গলবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে আরজু বলেন, খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ‘পরিকল্পিত’ এবং ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারী এর ‘পেছনে’ ছিলেন।

ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে আজহারুল হক আরজু

ক্ষমতাসীন দলটির স্থানীয় ওই নেতার বক্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে বুধবার ফেনীতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে ফেনী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আজিজ আহম্মেদ চৌধুরী, সহসভাপতি হাফেজ আহম্মদ, খায়েজ আহম্মদ, প্রিয় রঞ্জন দত্ত, উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল মজুমদার, দিদারুল কবির রতন, মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, যুবলীগ নেতা শুশেন চন্দ্র শীল, স্বপন মিয়াজিসহ বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আরজু নিজেকে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য হিসেবে পরিচয় দিলেও তিনি দলের কেউ নন বলে দাবি করেন সভাপতি রহমান।

তিনি বলেন, “গেল বার ফেনী সদরের ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় আজহারুল হক আরজুকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বর্তমানে দলের কোনা পদ পদবি নেই তার।”

“আরজুর সঙ্গে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পরিচয়দানকারী শাখাওয়াত হোসেনেরও ভিত্তি নেই। শাখাওয়াত কখনই যুবলীগের কোনো পদ-পদবিতে ছিলেন না।”

ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে নিজাম হাজারী ও আওয়ামী লীগের নামে ‘মিথ্যা বক্তব্য‘ উপস্থাপনের নিন্দা জানানো হয় ফেনীর সংবাদ সম্মেলন থেকে।

রহমান বলেন, “খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার সাথে জেলা আওয়ামী লীগ জড়িত নয়। এ নিয়ে সাংসদ নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে।

“ফেনীর সাবেক সাংসদ জয়নাল হাজারী, সাংবাদিক নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর উসকানিতে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে।”

সাংসদ নিজাম হাজারী

যে আসনে বর্তমানে নিজামী হাজারী সংসদ সদস্য, সেই ফেনী-২ (সদর-দাগনভূঞা) আসনে কয়েকবার সংসদ সদস্য ছিলেন জয়নাল হাজারী।

২০০৮ সালের নির্বাচনে সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতা ইকবাল সোবহান ওই আসনে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী ছিলেন। তিনি হেরে যান বিএনপির জয়নাল আবেদীনের (ভিপি জয়নাল) কাছে। ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন  নির্বাচনে ওই আসনে সংসদ সদস্য হন নিজাম হাজারী।

ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ অবজারভারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন নিয়ে এর সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বিরুদ্ধে গত ২৯ জানুযারি একটি মানহানির মামলা করেন নিজাম হাজারী।

ইকবাল সোবহান চৌধুরী

ফেনীর আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাকে জড়িয়ে এ ধরনের বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যাচার। অভিযোগটি যে সত্য নয়। যারা অভিযোগ তুলেছেন, তারা নিজেরাই তা ভালো করে জানেন।

“শুধু নিজেদের অপকর্ম আড়াল করার জন্য অন্যের ওপরে দোষ চাপানোর এটি একটি অপপ্রয়াস। এধরনের বিষোদগার বা মিথ্যাচার বন্ধ করার আহ্বান জানাই আমি।”

ফেনীর দলাদলিতে নিজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালন করছি আমি; ফেনীর দলাদলি-হানাহানি এসবের মধ্যে জড়িত থাকার সুযোগ নেই। আমার ইচ্ছেও নেই।”