ডাস্টবিনে পাওয়া নবজাতকের মৃত্যু নিয়ে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

গাজীপুরে ডাস্টবিনে পাওয়া নবজাতকের মৃত্যুর পর এর দায় নিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ।

আবুল হোসেন গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2017, 07:33 PM
Updated : 22 Nov 2017, 04:46 AM

রোববার দুপুরে গাজীপুর সিটির লক্ষ্মীপুরা এলাকার একটি ডাস্টবিন থেকে কয়েক ঘণ্টা বয়সী এক নবজাতককে উদ্ধার করা হয়, যাকে বিড়াল টানাটানি করছিল। এরপর তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়; কিন্তু চিকিৎসা শেষ না হতেই উদ্ধারকারী রেখা আক্তার শিশুটিকে তার বাসায় নিয়ে যান। এর কয়েক ঘণ্টা পরে শিশুটির মৃত্যু হয়।

শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে কীভাবে বের করা হলো, তাকে সুরক্ষা দেওয়ার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কি না তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে হাসপাতাল, পুলিশ, সমাজসেবা, জেলা প্রশাসনের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া গেছে।

স্থানীয় তিন সড়ক এলাকার স্প্যারো কারখানার পোশাক শ্রমিক উদ্ধারকারী রেখা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুপুর সোয়া ২টার দিকে তিনি ও রিকশাচালক মো. এরশাদ শিশুটিকে একটি ডাস্টবিনে ব্যাগে দেখতে পান। একটি বিড়াল শিশুটিকে টানা-হেঁচড়া করছিল এবং শিশুটি কাঁদছিল।

রেখা ও এরশাদ শিশুটিকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

রেখা বলেন, “হাসপাতাল থেকে শিশুটির প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়নি। পরে আমি নিজেই ২৩০ টাকার ওষুধ কিনে দিয়েছি। সেই ওষুধ দিয়ে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, রোববার সন্ধ্যার দিকে হাসপাতালের চিকিৎসকরা শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তখন ঢাকায় নেওয়ার কোনো লোক না পাওয়ায় তিনি কাউকে না জানিয়ে শিশুটিকে বাসায় নিয়ে যান। পরে রাতে একই বাসার অন্য কক্ষের ভাড়াটিয়া সদ্য মা হওয়া এক নারীর কাছে নিয়ে বুকের দুধ খাওয়ান।

“কিন্তু রাত দেড়টার দিকে শ্বাসকষ্ট হয়ে শিশুটি মারা যায়।”

পরদিন (সোমবার) দুপুরে স্থানীয় একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষণ দাস বলেন, অজ্ঞাত নবজাতকটি রোববার দুপুরে হাসপাতালে আনার পর বিষয়টি জেলা প্রশাসক, জয়দেবপুর থানার ওসি এবং জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়।

“জেলা প্রশাসকের খবরে সমাজসেবা কর্মকর্তা শংকর শরণ সাহা ফোনে একবার খবর জানতে চেয়ে আর কোনো খোঁজ নেননি। পুলিশও আর কোনো তৎপরতা দেখায়নি।”

পরে হাসপাতালে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য রেফার্ড করা হয়। বিকালে তাদের জন্য অ্যাম্বুলেন্সও ঠিক করা হয়েছিল।

কর্তব্যরত নার্সের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সন্ধ্যার দিকে নবজাতককে এক ওয়ার্ডবয় দিয়ে দোতলার শিশু ওয়ার্ড থেকে নিচে পাঠানো হয়। পরে নবজাতকসহ রেখা আক্তারকে নিচতলার জরুরি বিভাগে রেখে ওয়ার্ডবয় অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে যায়।

“এ সুযোগে নবজাতকসহ নারীটি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে বাসায় চলে যান। তারপরও রাতেই ফোন নম্বর সংগ্রহ করে ওই নারীকে নবজাতককে হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলি। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। কিন্তু পুলিশ তাকে উদ্ধার করেনি।”

তিনি আরও বলেন, “উদ্ধারকারী নারীটি ফোনে জানান, শিশুটিকে গরম শ্যাক ও দুধ পান করানোর পর ভালো আছে। তার কোনো সমস্যা নেই। আর হাসপাতালে নিতে হবে না।”

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক সৈয়দ মো. হাবিব উল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় কারো কোনো অবহেলা থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাজীপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “ওই নারী নবজাতককে হাসপাতালে আনার পর আমাদের জানানো হলেও নবজাতকটি নিয়ে যাওয়ার সময় বা পরে আমাদের জানানো হয়নি।

“ওই নারী বাচ্চার কোনো লিগ্যাল অভিভাবক নন। তারপরও বাচ্চাসহ নারীর হাসপাতাল ত্যাগের ঘটনায় হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ও সংশ্লিষ্ট নার্সদের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে দায়িত্ব এড়ানোর জন্য আরএমও শিশুটিকে ঢাকা রেফার্ড করেছেন মাত্র।”

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, “বাচ্চাটি হাসপাতালে আনার পর আমাকে জানানো হলে আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রপার ট্রিটমেন্ট করার জন্য বলি। পরে তাকে সমাজসেবার মাধ্যমে ঢাকার আজিমপুরে ছোট বাচ্চাদের টেক-কেয়ার (লালন-পালন) করার প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেব বলে জানাই। পরে যদি প্রকৃত মা কিংবা কেউ দত্তক নিতে চায় সেটা আমরা রেজিস্টারে এন্ট্রি করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

“কিন্তু এভাবে বাচ্চাটি হাসপাতাল থেকে হঠাৎ করে কোনো আননোন পারসন নিয়ে যাবে এবং বাচ্চাটি মারা যাবে এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা এ ঘটনাটি অনুসন্ধান করে দেখব এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে তার ব্যবস্থা নেব।”

এ বিষয়ে গাজীপুর জেলায় কর্মরত সমাজসেবা কর্মকর্তা শংকর শরণ সাহা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।