নাব্যতা সংকটে ফরিদপুর নদী বন্দর

ফরিদপুরের সিএন্ডবি ঘাটকে ‘ফরিদপুর নদী বন্দর’  ঘোষণা করার দুই বছর পার হলেও নাব্যতা সংকটের কারণে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

ফরিদপুর প্রতিনিধিমফিজুর রহমান শিপন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2017, 08:20 AM
Updated : 18 Nov 2017, 08:20 AM

২০১৫ সালে ঘোষিত এই নদী বন্দরের সীমানা নির্ধারণ করা হয় ফরিদপুর সদর উপজেলার উত্তরের সীমানা ডিক্রিরচর ইউনিয়নের টেপুরাকান্দি, দক্ষিণের সীমানা আলীয়াবাদ ইউনিয়নের সাদিপুর মৌজা পর্যন্ত।

নদী বন্দর ঘোষণা হলেও এখানে এখনও উন্নয়ন কাজ শুরু হয়নি। বন্দরকে ঘিরে নেই কোনো উন্নয়নমূলক কাজ।

পদ্মায় ড্রেজিং না হওয়ায় নাব্যতা সংকটে পড়েছে ঘাট এলাকা। এতে ঘাটে ভিড়তে পারছে না পণ্যবাহী কার্গো ও বড় বড় ট্রলারগুলো। ঘাট থেকে ৫/৬ কিলোমিটার দূরের পদ্মা নদীতে আটকে আছে বেশকিছু মালবাহী কার্গো।

চট্টগ্রাম থেকে আসা গম বোঝাই ঝাহাজের নাবিক মো. দীন ইসলাম বলেন, মাঝারি ধরনের পণ্যবাহী নৌযান চলাচলের জন্যে কমপক্ষে ৮ ফুট নাব্যতা থাকার প্রয়োজন হয়; কিন্তু পদ্মা নদীর ওই অংশে কোথাও কোথাও নাব্যতা রয়েছে চার ফুটেরও কম। এতে মালবাহী নৌযান নিয়ে ঘাটে পৌঁছানো যাচ্ছে না।

“সময় মতো মাল আনলোড না করতে পারায় আমাদের প্রতিদিনই লোকসানে মুখে পড়তে হচ্ছে।”

কুষ্টিয়ার সিমেন্ট ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান বলেন, সময় মতো মালামাল না আসায় এবং আটকে থাকা নৌযান থেকে ছোট ছোট নৌযান ব্যবহার করে পণ্য খালাস করে ঘাটে আনায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।  

ফরিদপুর নদী-বন্দরের কুলি শ্রমিকের সরদার জাফর শেখ বলেন, এই বন্দরে ছয় হাজারের বেশি শ্রমিকের জীবন-জীবিকা রয়েছে; যাদের একটি বড় অংশ এখন অলস সময় কাটাচ্ছেন।

“নদীর নাব্যতা না থাকায় কার্গো ঝাহাজ এখন কম আসছে। এতে বেকার হয়ে পড়ছে শ্রমিকরা।” 

ঘাট ইজারাদার কর্তৃপক্ষ মো. আনোয়ার হোসেন আবু বলেন, বর্তমান এলজিআরডি মন্ত্রীর চেষ্টায় সিএন্ডবি ঘাট ফরিদপুর নদী বন্দরে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে চট্রগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন বন্দর থেকে সরাসরি পণ্য আসে ফরিদপুর নদী বন্দরে। আর ফরিদপুর থেকে প্রতিদিন গরু ও ধান, পাটসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করা হয় বিভিন্ন এলাকায় এবং বিভিন্ন বন্দর থেকে সিমেন্ট, বালু, কয়লা, রডসহ অন্তত ৫০ ধরনের পণ্য আনা-নেওয়া করা হয়।

তিনি বলেন, নাব্যতা সংকট দুরীভূত না হলে মালামাল পরিবহন কমে যাবে, এতে কমে যাবে রাজস্ব আদায়। এছাড়া ঘাটের উন্নয়ন না করা হলে ঐতিহ্য হারাবে এ ঘাট।

ফরিদপুর চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ফরিদপুর নদী বন্দরটি এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। নদীতে নাব্যতা সমস্যা নিরসন না হলে ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম কিংবা নারায়ণগঞ্জ থেকে মাল আনতে পারবে না, বিকল্প উপায়ে পন্য আমদানি হলে তার ব্যয় বেড়ে যাবে অনেক। এই কারণে সরকারের কাছে আবেদন দ্রুত সময়ের মধ্যে ফরিদপুরের নদী বন্দরটি নাব্যতা সংকট নিরসন করুন।

বিআইডব্লিউটিএ-এর উপ পরিচালক (সার্ভে) আশফাকুর রহমান ফরিদপুর বন্দরের বিষয়ে বলেন, “ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে আমরা এরই মধ্যে জরিপের কাজ শুরু হয়েছে। জরিপ শেষে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে।”