‘পুলিশ চলি গেইলে ফির হামলা করবে কিনা’

রংপুর সদরের ঠাকুরপাড়ায় হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন ও হামলার পর বসেছে পুলিশী প্রহরা। গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেকে। এখনও উদ্বেগ-আতঙ্কে দিন পার করেছেন গ্রামবাসী।

রংপুর প্রতিনিধিশাহজাদা মিয়া আজাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2017, 02:01 PM
Updated : 11 Nov 2017, 02:01 PM

শনিবার বিকালে সরেজমিনে ঠাকুরপাড়ায় যায়, প্রশাসনের সহায়তার পর কেউ ঘর তুলছেন, কেউ পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র সরাচ্ছেন। 

শুক্রবার ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগ তুলে রংপুরে হিন্দু বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে কয়েক হাজার মানুষ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হন।

ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে শনিবার তিন হাজার করে টাকা, দুই বাণ্ডিল করে ঢেউটিন দেওয়া হয়। ঘরবাড়ি নির্মাণে সকল খরচ সদর উপজেলা প্রশাসন বহন করবে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে।

সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও হরিদেবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করেন। হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণ করা হয়। 

শুক্রবারের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সুধীর রায় (৬৭) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হামলাকারীদের বেশিভাগের মাথায় টুপি আছিল। তারা নারায়ে তকবির, আল্লাহু আকবর, শ্লোগান দিয়া আমার বাড়িত আগুন ধরে দেয়।

“আমার ছয়টা ঘর পুড়ি ছাই হয়া যায়। হামলাকারীরা তিনটা গরু লুট করি নিয়া যায়।”

তিনি বলেন, “এখন মালের ওপর বিপদ গেল, আবার কবে জানি হামাক ওপর বিপদ আসবে।”

ঠাকুরপাড়ার আরেক বাসিন্দা ক্ষিরোদ রায় বলেন, “দেশ স্বাধীনের পর এমন হামলা দেখি নাই। পুলিশ চলি গেইলে ফির হামলা করবে কিনা সেই চিন্তায় আছি।”

দীনেশ রায় অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা তার একটা গরু, দুটি ছাগল, নগদ ২০ হাজার টাকা ও এক বস্তা চাউল লুট করেছে।

“বাড়ির হরিসভা মন্দিরটাও ভাংচুর করে তারা। হরিসভা মন্দিরে পূজা করতাম। এখন পূজা করা বন্ধ হয়া গেইচে।” 

শুক্রবারের আগুন ও হামলায় ঠাকুরপাড়ায় নয়টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বৃদ্ধা দুলালী রানী বলেন, “হামরা তোনো দোষ করি নাই, ক্যানে হামার বাড়িঘর পুড়ি দেলে?”