রাবির প্রশ্নে ‘সাম্প্রদায়িক উসকানি’: দায়ীদের বিচার দাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ‘সাম্প্রদায়িক’ প্রশ্ন দেওয়ায় ক্ষোভ-প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠনগুলো এ ধরনের প্রশ্ন প্রণয়ন ও যাচাই-বাছাইকারীদের শনাক্ত করে শাস্তি দাবি করেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিশফিকুল ইসলাম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Oct 2017, 09:35 AM
Updated : 27 Oct 2017, 10:05 AM

বুধবার বিকালে অনুষ্ঠিত চারুকলা অনুষদের ‘আই’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার দুই নম্বর সেটের ৭৬ নম্বর প্রশ্নটি ছিল- ‘বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ কোনটি? উত্তরের জন্য দেওয়া চারটি অপশন ছিল- (ক) পবিত্র কুরআন শরীফ (খ) পবিত্র বাইবেল (গ) পবিত্র ইঞ্জিল (ঘ) গীতা।

গীতার আগে ‘পবিত্র’ ছিল না।

একই সেটের ৪১ নম্বর প্রশ্নটি ছিল- ‘মুসলমান রোহিঙ্গাদের উপর মায়েনমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সশস্ত্র হামলা চালায় কত তারিখে?

পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে এ দুটি ‘সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন’ নিয়ে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

তবে এ ধরনের প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন চারুকলা অনুষদের ডিন মোস্তাফিজুর রহমান।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি কিংশুক কিঞ্জল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়কে অসাম্প্রদায়িক আচরণ করতে হবে; কারণ এখানে অনেক ধর্ম মত ও দর্শনের শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। যারা এ ধরনের প্রশ্ন প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে বের করে শোকজ করা উচিত।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বখতিয়ার বলছেন, “এ ধরনের প্রশ্ন সকল ধর্ম ও সংস্কৃতি সংবেদনশীলতার পরিপন্থী।”

‘বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ কোনটি’- ভীষণভাবে ‘সাম্প্রদায়িক’ প্রশ্ন উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “এ ধরনের প্রশ্ন স্থিতিশীলতা নষ্ট ও সাম্প্রদায়িক অ্যাটিটিউট গড়ে তোলার জন্য করা হয়।”

যারা এ ধরনের প্রশ্ন করেছেন এবং যাচাই-বাছাই করেছেন তাদের শনাক্ত করে জবাবদিহির আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।  

বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শহীদ ইকবাল বলেন, “চারটা ধর্মগ্রন্থের মধ্যে কোনটা শ্রেষ্ঠ- একজন শিক্ষার্থীর মেধা যাচাইয়ের জন্য এটা কোনো প্রশ্ন হতে পারে না। যারা এ ধরনের প্রশ্ন প্রণয়ন ও যাচাই-বাছাই করেন বরং তারা মেধা যাচাইচের ক্ষেত্রে আসলে কতটুকু যোগ্য তা নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে।” 

“এ ধরনের প্রশ্ন কেবল সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দেয়।”

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় হল উন্মুক্ত চিন্তা-ভাবনার জায়গা; এই ধরনের সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন কী কারণে করেছেন, সেটা বলতে পারব না। তবে আশা করব ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রশ্ন শিক্ষকরা আর করবেন না।”

ছাত্র ইউনিয়নের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এ এম শাকিল হোসেন বলেন, “চারুকলার মতো একটা সাবজেক্টে ভর্তি পরীক্ষায় এ ধরনের প্রশ্ন করা ঠিক হয়নি। চারুকলা তো সবচেয়ে বেশি অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা করে। সেখানে যদি সাম্প্রদায়িক লোকজন ঢুকে যায়; তবে চারুকলা ভবিষ্যতে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোহবান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রকৃত ধার্মিকরা ধর্ম নিয়ে এ ধরনের নোংরা খেলা খেলে না। এটা পরিকল্পিত হয়েছে কি না সেটা খতিয়ে দেখব। শুধু খতিয়ে দেখব না, এটার ব্যবস্থাও নেব আমরা।”

“ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিষয়টা খুবই স্পর্শকাতর। এর ভেতর কোনো কারসাজি রয়েছে কিনা এটা আমরা খতিয়ে দেখব। প্রাথমিকভাবে প্রশ্ন প্রণয়নকারীদের কাছে লিখিতভাবে কৈফিয়ত তলব করা হবে।