বাঙালি নদীর ৬ সেতু, বদলে গেছে বগুড়ার চালচিত্র

বগুড়ায় বাঙালি নদীর উপড় নির্মিত ছয়টি সেতু এক সময়ের ফেরি পারাপারে মানুষের ভোগান্তির অবসান ঘটিয়ে পাল্টে দিয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2017, 04:24 PM
Updated : 19 Oct 2017, 04:24 PM

এক সময় ওই সেতুগুলোর জায়গায় ছিল ছয়টি খেয়াঘাট। এরপর হয় ফেরি পারাপার। কয়েকটি বেইলি সেতুও হয়েছিল। এর সবই এখন অতীত।  

ওই সময় সন্ধ্যার পর ডাকাতের ভয়ে মানুষ খেয়া পারাপার হতো না। সেতু হওয়ার পর দিনরাত যানবাহন চলাচল করছে নির্ভয়ে।

সেতু নির্মাণ হয়েছে ধুনটের বথুয়াবাড়ী ঘাট, বিলচাপড়ী ঘাট, বেড়েরবাড়ী ঘাট, সারিয়াকান্দির কতুবপুর মাঝিপাড়া ঘাট, জোড়গাছা ঘাট এবং সারিয়াকান্দি ঘাট এলাকায়।

গত ৮/৯ বছরে স্থানীয় সরকার এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেতুগুলো নির্মাণ করেছে। অতি সম্প্রতি সারিয়াকান্দির কতুবপুর মাঝিপাড়া ঘাটের সেতুটি নির্মিত হয়।

এলাকাবাসী জানায়, সেতু হওয়ার আগে এসব ঘাট এলাকা দিয়ে রাতে মানুষ চলাচল করতে ভয় পেত। ধুনটের বথুয়াবাড়ী ও বেড়েরবাড়ী বাঙালি নদীর খেয়াঘাটে সন্ধ্যার পর কেউ পারাপারে আসত না।

খেয়া নৌকার পর এলো ফেরি পারাপার। বড় যানবাহন এপার থেকে ওপারে যেতে বিরম্বনা। এছাড়া রাতে সেই ফেরি পারাপার বন্ধ থাকত। বর্ষাকালে বড় যানবাহন চলাচল বরতে গেলে বন্ধই হয়ে যেত।

সেতু হওয়ার দুটি ঘাটে বেইলি ব্রিজ হলেও তা বছরে দু/তিন বার করে ভেঙে ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যেত।

ধুনটের গোসাইবাড়ীর আব্দুল মজিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেতু নির্মাণে বগুড়াসহ অন্য যেকোনো এলাকায় রাতদিন যেকোনো সময়ে যেতে পারি এখন। আগে এটা চিন্তাই করা যেত না।”

সারিয়াকান্দির কতুবপুর মাঝিপাড়া ঘাটে নবনির্মিত সেতু

শুধু যাতায়াত নয়, কাঁচা মালামালসহ অন্যান্য মালামাল যানবাহনে নিয়ে গিয়ে সহজেই শহরে বিক্রি করা যায়। দামও ভালো পাওয়া যায় বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, এক সময় দূরের শিক্ষার্থীদের বগুড়ায় মেসে থেকে লেখাপড়া করতে হতো। অথচ এখন ৫০ কিলোমিটার দূর থেকে বাসে আসা-যাওয়া করে বগুড়ায় পড়তে পারে।  

সারিয়াকান্দির লাবলু সরকার বলেন, সারিয়াকান্দি খেয়াঘাট পার হতেই সময় লাগত এক ঘণ্টা। এখন এক ঘণ্টায় বগুড়ায় যাওয়া যায়।

ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই খোকন বলেন, “ধুনটে বাঙালি নদীর তিনটি খেয়াঘাট ছিল ধুনটের দুঃখ। আজ সেই সেতু হওয়ায় দুঃখ ঘুচে গেছে।”

সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, শুধু বাঙালি নদীর উপর সেতু নয়, সারিয়াকান্দির দুর্গম চরাঞ্চলের যোগাযোগেরও উন্নয়ন হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী নাইম উদ্দীন জানান, ছয়টি ব্রিজ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং সড়ক ও জনপথ করেছে। সম্প্রতি ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ব্রিজটি বাঙালি নদীর উপর সবচেয়ে বড় ব্রিজ।

ধুনট-শেরপুর নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, “বাঙালি নদী ছিল ধুনট-শেরপুরের মানুষের যোগাযোগের একটা বড় দুঃখ। আমি এলাকার মানুষ হিসেবে সেই দুঃখ ঘোচানোর অঙ্গীকার করেছিলাম। অন্যান্য উন্নয়নের সাথে তাই বাঙালি নদীর উপর তিনটি সেতুকে প্রাধান্য দিয়েছি।”