গাজীপুরে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, আহত ২৫

বকেয়া বেতন-ভাতা নিয়ে গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2017, 01:54 PM
Updated : 18 Oct 2017, 02:30 PM

কালিয়াকৈর উপজেলার বাড়ইপাড়ায় তৈরি পোশাক কারখানা ‘হেসং বিডি লিমিটেড’-এ বুধবার এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, শ্রমিকরা আগুন জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। এ সময় শ্রমিক-পুলিশ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াও হয়।

শ্রমিকদের ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ পুলিশের লাঠিপেটা এবং রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপে পথচারীসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে শ্রমিকদের দাবি।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন নাজমা বেগম (৩৫), অনিতা রানী বর্মণ (৩৯), হেনা আক্তার (৩০), রেহেনা আক্তার (২৪), ফাতেমা বেগম (৩০), ফুলেরা বেগমের (২৯)।

এরমধ্যে রক্তাক্ত জখম ফাতেমা বেগমকে স্থানীয় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। কয়েকজনকে দেওয়া হয় প্রাথমিক চিকিৎসা। আহত সবার নাম জানা যায়নি।

কারখানার শ্রমিক খালেদা বেগম বলেন, হেসং বিডি লিমিটেডে আড়াই হাজার শ্রমিক রয়েছে। শ্রমিকদের গত তিন মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। এছাড়া গত কোরবানী ঈদের ছুটির টাকা ও বাৎসরিক ছুটির টাকাও বকেয়া আছে।

“ওই তিন মাসের বকেয়া বেতন, বার্ষিক ছুটি ও ঈদের ছুটির টাকা চলতি মাসের ৯ অক্টোবর দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের দেওয়া ওই তারিখে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। শ্রমিকরা ওইদিন কাজ না করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কারখানার ভিতর বসে থাকেন।”

এভাবে কারখানা কর্তৃপক্ষ ৬-৭টি তারিখ দিয়েও শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ করেনি বলে অভিযোগ করেন খালেদা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিনের মতো বুধবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় যান; কিন্তু কাজ না করে তারা কারখানার ভিতরে বিক্ষোভ শুরু করেন।

ওই কারখানায় অবস্থানরত পুলিশ সকাল ১০টার দিকে বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের বাইরে বের করে দেয়। এতে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। পরে শ্রমিকরা কারখানার সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া বাড়ইপাড়া-জালশুকা আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ রেখে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে ওই সড়কে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এ সময় পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে শ্রমিকরা পিছু হটে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার বাড়ইপাড়া বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নেন। সেখানে আগুন জ্বালিয়ে ওই মহাসড়ক অবরোধ রেখে উত্তেজিত শ্রমিকরা রাস্তার উপর বসে পড়েন। এসময় ওই মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

খবর পেয়ে ঢাকা-১ ও  গাজীপুর-২ এর শিল্পপুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের শান্ত করা চেষ্টা চালায়। কিন্তু শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ শ্রমিকদের পাল্টা লাপিটা শুরু করে। পরে পুলিশ রাবার বুলেট এবং টিয়ারসেলও নিক্ষেপ করে। প্রায় এক ঘণ্টা পর মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

আহত শ্রমিক ফাতেমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, তার কপালে পুলিশের রাবার বুলেট লেগেছে।

আরেক শ্রমিক নুরজাহান বেগম বলেন, তাদের তিন মাসের বেতন বকেয়া, বাৎসরিক ছুটি ও গত ঈদের ছুটির টাকা বকেয়া রয়েছে। ওই পাওনাদি দেওয়ার জন্য ৬-৭টি তারিখ দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি।

“বরং আমাদের সঙ্গে কোনো কথা না বলে কর্মকর্তারা কারখানা থেকে পালিয়ে যায়। এই পাওনাদির দাবিতে বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশ নির্বিচারে আমাদের উপর লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। আমাদের অন্তত ২৫ জন শ্রমিক আতহ হয়েছে।”

কারখানার জেনারেল ম্যানেজার নাজমুল আলম বলেন, ওই সময় তিনি কারখানায় ছিলেন না। তাই বিয়ষটি তার জানা নেই।

শিল্প পুলিশ গাজীপুর-২ এর ওসি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।

“পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ ও কয়েকটি টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়। শ্রমিকরা পিছু হটে গেলে সাড়ে ১১টার দিকে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।”