বগুড়ায় মারোয়ারি ধর্মশালার নামে সম্পত্তি দখল

বগুড়া শহরে মারোয়ারী ধর্মশালা কমিটির নামে ২৮ শতক জমি দখল করা হয়েছে, যেখানে ব্যাংকসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2017, 06:31 PM
Updated : 13 Oct 2017, 06:32 PM

জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনার সময় যুবলীগের নেতাকর্মীরা সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

রাতেই পুরো জায়গাটিতে টিনের ঘেরাও দেওয়া হয়।

এদিকে, শুক্রবার সন্ধ্যায় সংশ্লিষ্টদের জমি থেকে দখল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

মারোয়ারী ধর্মশালা কমিটির সভাপতি কল্যাণ প্রসাদ পোদ্দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আদালতের রায়ে তারা এ সম্পত্তির মালিক।

“ব্যস্ততম এলাকায় দিনে দখল নিলে সমস্যা হবে। তাই ডেভেলপার সংস্থা রাতে ঘিরে নিয়েছে। আর এ কাজে জেলা যুবলীগ সভাপতি ও জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটন ও অন্যরা সহযোগিতা করেছেন।”

রূপালী ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) হাবিবুর রহমান জানান, তারা বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত অফিস করেছেন। কোনো নোটিশ ছাড়া এভাবে জায়গাটি দখল করায় তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

বগুড়া জেলা প্রশাসক নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, কেউ ব্যাংক অবরুদ্ধ করতে পারে না। তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) হাবিবুল হাসান রুমিকে নিদেশ দিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর ২০-২২টি মোটরসাইকেল নিয়ে একদল যুবক শহরের সাতমাথার টেম্পল রোডের যুবলীগ কার্যালয়ের সামনে সমবেত হয়। রাত ১টার পর স্টিল সিট এনে ওয়েল্ডিং করে ওই জায়গার সামনে প্রাচীর দেওয়া হয়।

স্থানীয়রা জানান, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় বগুড়া শহরের মধ্য দিয়ে মাটিডালী থেকে বনানী ডিভাইডারসহ রাস্তা সম্প্রসারণ করা হয়। ওই সময় জমি অধিগ্রহণ করা হলে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় সড়কের পশ্চিম পাশে বগুড়া প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ হয়ে যায়।

পিছনে রূপালী ব্যাংক জোনাল শাখা, শহর যুবদল, জেএসডি, বাটারফ্লাই-এলজির শোরুম, দৈনিক উত্তরবার্তা অফিস, সাপ্তাহিক নোতুন খবর ও শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসার কাপড় ও জুতার দোকান থেকে যায়।

মারোয়ারী ধর্মশালা কমিটি ওই ২৮ শতক সম্পত্তি তাদের দাবি করে আসছিল। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

বগুড়া শহরের উত্তর চেলোপাড়ার গেঞ্জি ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ বলেন, তিনি ২২ বছর ধরে সাতমাথার ওই জায়গায় ব্যবসা করে আসছেন। কয়েকদিন আগে যুবলীগের মনির হোসেন তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়ে জায়গা খালি করতে নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কেনাবেচা করে বাড়িতে গেছেন। শুক্রবার সকালে এসে দেখেন স্টিলের সিটের প্রাচীর দিয়ে জায়গা ঘেরা। উপরে মারোয়ারি ধর্মশালা নামে সাইনবোর্ড।

বগুড়া শহর যুবদলের সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, জেলা যুবলীগ সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটনের উপস্থিতিতে জায়গা দখল করা হয়েছে। অফিস দখলের প্রতিবাদে তারা হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।

তবে জেলা যুবলীগ সভাপতি লিটন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, ঘটনার সময় তিনি অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে ক্লিনিকে ছিলেন। দখলের সময় তার উপস্থিতি কেউ প্রমাণ করতে পারলে সংগঠন থেকে পদত্যাগ করবেন।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ডাবলু বলেন, যুবলীগ দখলে বিশ্বাস করে না। তার সংগঠনের লিটন, মনির বা অন্য কেউ সেখানে গেলে নিজ দায়িত্বে গিয়েছেন। এর দায়-দায়িত্ব সংগঠন নিবে না।

সদর থানার ওসি এমদাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সাতমাথায় জায়গা দখলের ব্যাপারে তার কিছু জানা নেই।

শনিবার সকালের মধ্যে দখল প্রত্যাহারের নির্দেশ

মারোয়ারী ধর্মশালার নামে দখল করা জায়গাটি অর্পিত ‘ক’ তালিকাভুক্ত সম্পত্তি উল্লেখ করে শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে দখল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জমি নিয়ে বিবদমান দুপক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) হাবিবুল হাসান রুমি বলেন, জেলা প্রশাসন শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে দখল সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছে। অন্যথায় সাড়ে ১০টায় প্রশাসন দখল উচ্ছেদ করবে।

হাবিবুল হাসান রুমি জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশ পাওয়ার পর উভয়পক্ষকে কাগজপত্রসহ তার কার্যালয়ে ডাকা হয়। কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ সম্পত্তি নিয়ে মামলার নিস্পত্তি হয়নি। সম্পত্তিটি অর্পিত ‘ক’ তালিকাভুক্ত; অর্থাৎ এখনও সরকারের।

ধর্মশালার নেতৃবৃন্দ দখলের স্বপক্ষে কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি বলেও জানান সহকারী কমিশনার।