‘সম্পত্তি আত্মসাতের পর গুম, আসামির সঙ্গে পুলিশের সখ্য’

ঢাকার সাভার উপজেলায় মামলা দিয়ে হয়রানির করে সম্পত্তি আত্মসাতের পর এবার এক যুবককে গুম করার অভিযোগ উঠেছে।

সাভার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2017, 06:43 AM
Updated : 7 Oct 2017, 06:54 AM

উপজেলার বনগ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের স্ত্রী জবেদা বেগম অভিযোগ করেছেন, রাতের আঁধারে তাদের ঘরে সিঁধ কেটে ডাকাতিসহ ছেলে হানিফ পালোয়ানকে (৩৩) অপহরণের পর গুম করা হলেও পুলিশ তাকে উদ্ধারে পদক্ষেপ নেয়নি।

এ ঘটনায় তিনি মামলা করার পর আসামিরা জামিন নিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে বলেও তার অভিযোগ।

আসামিরা হচ্ছেন - প্রতিবেশী রমিজ উদ্দিন (৫০), জমির উদ্দিন ওরফে জমু (৫৫), তমিজ উদ্দিন (৪৫), তাজিম উদ্দিন (৪২), নাজীম উদ্দিন (৪০), নূরজাহান বেগম, সুমন মিয়া, রুবেল মিয়া, কালাচান ওরফে কালা, মো. আসলামসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জন।

জবেদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হানিফের পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ছয় একর সম্পত্তি আসামিরা প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। এরপর আমাদের চাপে রাখার জন্য গত ৩১ জুলাই গভীর রাতে ঘরে সিঁধ কেটে হানিফকে অপহরণ করা হয়।

“তখন ঘরে থাকা ১০ ভরি সোনার গয়না ও এক লাখ টাকাও লুট করা হয়। ওই রাতে ওই ঘরে হানিফ একাই ঘুমিয়ে ছিল। এর আগেও তারা বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারধর ও ভাংচুর করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একাধিক জিডিও করা হয়েছে।”

জবেদার অভিযোগ, পুলিশ হানিফকে উদ্ধারে সহযোগিতা করছে না।

“দুই মাস হয়ে গেলেও পুলিশ অপহৃত হানিফকে উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো আসামিদের সাথে পুলিশের সখ্য রয়েছে। আসামিরা আদালত থেকে জামিনে এসে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে।”

মামলার প্রধান আসামি রমিজ উদ্দিন একসময় স্যান্ডেল ও আইসক্রিম কারখানায় শ্রমিককের কাজ করতেন বলে জানান জবেদা বেগম।

হানিফের ভগ্নিপতি লুৎফর রহমান বলেন, হানিফ ছোট থাকা অবস্থায় তার বাবা রিয়াজ উদ্দিন মারা যান। তাই তার লেখাপড়া শেখা হয়নি। বাবার সম্পত্তির মালিক হানিফ ও তার বোন।

“প্রতিবেশী রমিজ সরল হানিফকে ফুঁসলিয়ে পরিবারের অমতে বিয়ে করিয়ে দেন। পরে আবার সেই মেয়ের পরিবারকে দিয়ে ২০০৭ সালে একটি নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করান রমিজ উদ্দিন। মামলা থেকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হানিফের কাছ থেকে কয়েক দফায় প্রায় ১২ কোটি টাকা দামের ছয় একর সম্পত্তি দলিল করে নেন রমিজ উদ্দিন।”

জমি লিখে নেওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি বুঝতে পেরে বনগ্রাম কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পরিচালনা পঞ্চায়েত কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় জানিয়ে তিনি বলেন, “গত ৩১ জুলাই ছিল পঞ্চায়েত কমিটির সালিশ বৈঠক। কিন্তু রমিজ সেদিন সালিশ বৈঠকে হাজির না হয়ে ওই দিন রাতে হানিফকে অপহরণ করেন।”

সরেজমিনে বনগ্রামে গিয়ে রমিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ বিভিন্ন মানুষের মুখে মুখে শোনা গেছে। হয়রানির ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পায় না বলে তারা জানান।

অপহরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার এসআই সেলিম রেজা আসামিদের সঙ্গে পুলিশের সখ্য থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, “অপহৃত হানিফকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। শিগগিরই তাকে উদ্ধার করতে পারব।”

ওসি মোহসিনুল কাদিরও অপহৃত হানিফকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রমিজ উদ্দিনের বাড়ি গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে বন্ধ পাওয়া গেছে।

রমিজের ঘনিষ্ঠজন গেণ্ডা এলাকার বুলুর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি রমিজের প্রসঙ্গ তুলতেই সংযোগ কেটে দেন।