এক আঙিনায় মসজিদ-মন্দির, মিলেমিশে চলছে আচার

লালমনিরহাট শহরে একই আঙিনায় রয়েছে একটি মসজিদ ও মন্দির। একই জায়গায় থাকা দুই ধর্মের দুই উপসনালয়ে শত বছর ধরে পারস্পারিক সহযোগিতায় চলছে ধর্মীয় আচার ও রীতি নীতি।

লালমনিরহাট প্রতিনিধিআনিছুর রহমান লাডলা, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2017, 11:56 AM
Updated : 28 Sept 2017, 11:56 AM

শহরের পুরান বাজারের কালীবাড়ি এলাকায় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদ ও মন্দিরের প্রাঙ্গণ একটি। সামনের খোলা জায়গাটিতে পূজা উপলক্ষ্যে যেমন মেলা বসেছে, তেমনি ওয়াজ মাহফিলসহ মুসলমানদের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।

হানাহানি ও মতবিরোধ ছাড়াই শত বছর ধরে এভাবেই পারাস্পারিক সহযোগিতায় ধর্মীয় আচার পালন করে আসছেন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মানুষরা। সম্প্রীতির এই স্থানটি দেখতে বিশেষ করে দূর্গাপূজার সময় দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরা আসেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৮৩৬ সালে দুর্গামন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে সেখানে কালীমন্দির প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পুরান বাজার এলাকা অনেকের কাছে জায়গাটি কালীবাড়ি নামেই পরিচিত। এরপর মন্দির প্রাঙ্গনে ১৯০০ সালে একটি নামাজ ঘর নির্মিত হয়। এ নামাজ ঘরটিই পরবর্তীতে পুরান বাজার জামে মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে।এরপর থেকে কোন বিবাদ ও ঝামেলা ছাড়াই সম্প্রীতির সঙ্গে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করে আসছে দুই ধর্মের মানুষ।

মন্দির কমিটির উপদেষ্টা গোবিন্দ দাস বলেন, “দুর্গাপূজার সময় ঢাক-ঢোল ও বাদ্যযন্ত্র বাজানো নিয়ে সমস্যা হয় না। মসজিদ ও মন্দির কমিটির সদস্যরা বসে ঠিক করে নিই কখন এবং কীভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করা হবে।”

একই কথা জানালেন মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি আব্দুল বাতেন রতন।

এই সম্প্রীতি অনন্তকাল অটুট থাকার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।

কালীবাড়ী মন্দিরের পুরোহিত শংকর চক্রবর্তী বলেন, নামাজের সময়গুলোতে মন্দিরের সকল প্রকার বাদ্য বাজনা বন্ধ রাখা হয়।  

নামাজ শেষ হওয়ার পরে মুসল্লিরাও মসজিদে দেরি না করে বেরিয়ে যান যাতে করে পূজারীরা পূজা-অর্চনা করতে পারে বলে জানালেন মসজিদের ইমাম শাহিনুর ইসলাম শাহিন।

লালমনিরহাটে ধর্মীয় সম্প্রতির এ নিদর্শন বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে এক অপূর্ব উদাহরণ বলে মনে করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ।

তিনি বলেন, “অসম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ লালমনিরহাট।

“পাশাপাশি এই মসজিদ ও মন্দির উভয় ধর্মের মানুষদের মধ্যে সৌহাদ্যপূরর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বের ধর্মাপরায়ণ মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”