জানা যায়নি মৃত্যুর কারণ, ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন সাবিনার

পরিবার রাজি না হওয়ায় কলসিন্দুরের ফুটবলকন্যা নামে পরিচিতি পাওয়া ময়মনসিংহের সাবিনা আক্তারের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে।

ইলিয়াস আহমেদ ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2017, 06:10 AM
Updated : 28 Sept 2017, 10:43 AM

‘ঠাণ্ডা-জ্বরে’ আক্রান্ত হওয়ার পর মঙ্গলবার তার মৃত্যু হলে পরদিন জেলার ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ রানীপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ধোবাউড়া থানার ওসি শওকত আলম বলেন, তারা সাবিনার পরিবারের সদস্যদের অনুরোধ করেছিলেন ময়নাতদন্তের অনুমতির জন্য।

“পরিবার রাজি না হওয়ায় তা করা যায়নি। তার বলেছেন, মৃতকে তারা কাটাছেঁড়া করে কষ্ট দিতে চান না।”

আকস্মিক এই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে স্থানীয় চিকিৎসক ও স্বজনরা তাদের ধারণার কথা জানিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে।

ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক খাদেমুল ইসলাম বলেন, হাইপাট্রোপিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি নামে একধরনের বংশগত রোগ আছে। এর কোনো পূর্বলক্ষণ নেই। এতে অল্প বয়সেই মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকে।

“আমরা ধারণা করছি সাবিনা এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। তার বাবা সেলিম মিয়াও অল্প বয়সে হঠাৎ করে মারা গেছেন বলে শুনেছি।”

সাবিনা কয়েক দিন জ্বর ও ঠাণ্ডায় ভুগলেও তা গুরুতর ছিল না বলে জানিয়েছেন ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পা কর্মকর্তা ওয়ায়েজ উদ্দিন ফরাজী।

তিনি বলেন, “হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় তার মৃত্যু হয়। আমরা তাকে মৃত পেয়েছি। অসুস্থ অবস্থায় পেলে হয়ত রোগ সম্পর্কে জানা যেত। তবে এটি বংশগত রোগ বা হার্টঅ্যাটাক বলে ধারণা করছি।”

সাবিনার মা ফজিলা খাতুনও অসুস্থ জানিয়ে তিনি বলেন, “তিনি সুস্থ হলে তার সঙ্গে কথা বলে আমরা সাবিনার রোগ সম্পর্কে ধারণা পাব বলে আশা করছি।”

তিনি যে কোনো রোগ দেখা দেওয়া মাত্রই সবাইকে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেন।

সাবিনার খালা রাহেলা বেগম বলেন, “বাপের মতোই সাবিনার একটু জ্বর আর ঠাণ্ডা লাগছিল। এজন্য আমরা তারে নাপা আর হিস্টাসিন খাওয়াইছি। সে এক দিনও বিছানায় পড়েছিল না। তার মধ্যে তেমন কোনো অসুখের লক্ষণ ছিল না।

“মঙ্গলবার সাবিনা খারাপ লাগছে কইলে তারে অটো দিয়া হাসপাতালে লইয়া যাই। তহন ডাক্তার কইছে সে মইরে গেছে।”

কথা বলতে বলতে থেমে যান রাহেলা।

“অভাবের সংসারে সাবিনা তার ভাই ও মাকে দেখত। ভাইকে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখাত। এখন কী বইলা তার মারে সান্ত্বনা দেই কন,” বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাহেলা।

তিনি বলেন, মেয়ে মেয়ে বলে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন সাবিনার মা ফজিলা খাতুন।

সাবিনার সতীর্থ সানজিদা, তহুরা ও মার্জিয়া জানান, সাবিনাকে নিয়ে তারা চারজন একটা পরিবারের মতো ছিলেন।

তারাও একই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ফুটবলার।

সানজিদা বলেন, “আমরা সবার সুখ-দুঃখ সবাই ভাগ করে নিতাম। আজ আমাদের ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। তা আর হল না। আমরা নিজেদের শক্তি-সহাস হারিয়ে ফেলেছি।”

তারা সাবিনার স্মৃতিরক্ষাসহ তার পরিবারকে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন।

সাবিনা ২০১৫ এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ গার্লস রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলে জয়ী বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড় ছিলেন।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর যশোরে অনূর্ধ্ব ১৪ টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা শেষে ১৮ সেপ্টেম্বর ছুটিতে বাড়িতে আসার পর থেকেই তিনি জ্বরে ভুগছিলেন।

কলসিন্ধুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মালারানী সরকার জানান, সাবিনা কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট দিয়ে খেলা শুরু করেন।

অসাধারণ নৈপুণ্যের জন্য সাবিনা অল্পসময়ের মধ্যে কলসিন্দুরের ফুটবলকন্যা নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

ময়মনসিংহ জেলা ক্রীড়া সংস্তার সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জাহান চৌধুরী শাহীন বলেন, সাবিনার পরিবারের লোকজন রোগটিকে বড় করে দেখেননি। সাবিনার মতো খেলোয়াড়দের দিকে পরিবারের বাইরে থেকেও সবার নজর রাখা দরকার।