এখনও পুরোপুরি সুস্থ্ নই: আসলাম

ফাঁসির একদিন আগে ‘অস্বাভাবিক আচরণের’ কারণে পার পাওয়ার পর কারামুক্ত ফরিদপুরের যুবলীগ নেতা আসলাম ফকির বলছেন, এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন তিনি।

ফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2017, 02:53 PM
Updated : 25 Sept 2017, 03:00 PM

তবে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আসলাম এরইমধ্যে প্রচারণা শুরু করায় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকার কথা জানিয়েছেন তার হাতে খুন হওয়া সাবেক চেয়ারম্যান একেএম শাহেদ আলী মিয়ার স্ত্রী পারুল বেগম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একজন মানুষকে খুন করল। আইনের বিচারের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু সেটাতো হলো না। আসামি অসুস্থতার ভান করে ফাঁসির দণ্ড থেকে মুক্তিও পেল।

“এখন নির্বাচন করতে গণসংযোগ করছে। আমার বাসার কাছে মঞ্চ বানিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। এলাকার প্রভাবশালীরা তাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।”

এতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জানিয়ে পারুল বলেন, বিষয়টি ফরিদপুর-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনকেও জানিয়েছেন। বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

তার ওই শঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে আসলাম ফকির বলেন, “আমি মানসিকভাবে এখনও পুরোপুরি সুস্থ নই। মাঝে মাঝে অসুস্থ থাকি। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছি।”

গত ২৫ অগাস্ট কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে এলাকায় ফেরার পর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহর সার্বক্ষণিক সহচর হিসেবে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন আসলাম ফকির। সামনের নির্বাচনে মানিকদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

জাফরউল্যাহর স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ নিলুফার জাফরউল্যাহর আবেদনেই ১৪ বছরের কারাদণ্ডের আদেশের আড়াই বছরের মাথায় ছাড়া পেয়েছেন আসলাম।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের মানিকদহ গ্রামের বাসিন্দা হলেও আসলাম লেখাপড়া ও রাজনীতি করেন পাশের সদরপুর উপজেলায়। এক পর্যায়ে তিনি ওই উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে মানিকদাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও হন তিনি।

২০০৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সহযোগীদের নিয়ে ওই ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহেদ আলীকে কুপিয়ে হত্যার দায়ে ফরিদপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত আসলাম ফকিরকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়। হাই কোর্টও এ রায় বহাল রাখে।

২০১৩ সালের ১৯ মে হত্যাকাণ্ডে দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করেন আসলাম। ২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর ওই আবেদন নাকচ হয়ে গেলে কাশিমপুর কারাগার কর্তৃপক্ষ ওই বছরের ১৩ নভেম্বর তার ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আগের দিন আসলাম ‘অস্বাভাবিক আচরণ’ করলে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর স্থগিত করা হয়, ওই দিনই রাষ্ট্রপতির কাছে দ্বিতীয় দফা প্রাণভিক্ষার আবেদন হয় আসলামের।

এবার রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পান আসলাম, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তার দণ্ড হ্রাস করে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বিশেষ দিবসে বন্দিদের সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে গত স্বাধীনতা দিবসে আসলামকে মুক্তি দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনানুষ্ঠানিক চিঠি দেন সাংসদ নিলুফার জাফরউল্যাহ।

এরপর ২৫ অগাস্ট গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে মুক্তি পান আসলাম, তিন দিন পর মানিকদহ গ্রামে ফেরেন তিনি।

মোট ১৩ বছর দুই দিন কারাভোগের পর গ্রামে ফিরলেও এখনও এলাকার মানুষের কাছে ‘জনপ্রিয়’ বলে দাবি করেন আসলাম ফকির।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তো দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম। একবার চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিলাম। এখন বাড়িতে লোকজন আসে। আর দলীয় নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি। এলাকার মানুষ চাইলে নির্বাচনও করতে পারি।

“যে কোনো মানুষ দুর্দিনে যাকে পাশে পায় তাকেই তো মনে রাখে, তাই নয় কি? এটাতো কোনো অপরাধ নয়।”