শেষ সময়ে ব্যস্ত শার্শার প্রতিমা শিল্পীরা

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে যশোরের শার্শায় এবার ২৭টি পূজামণ্ডপে প্রস্তুতি চলছে। প্রতিমা তৈরিতে শেষ সময়ের ব্যস্ততায় রয়েছেন প্রতিমা শিল্পীরা।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2017, 04:09 PM
Updated : 20 Sept 2017, 04:09 PM

এবার শার্শায় বিভিন্ন মণ্ডপে যারা প্রতিমা নির্মাণ করছেন তাদের কয়েকজন হলেন যশোরের বাসুদেব বিশ্বাস, সাতক্ষীরার বাসুদেব ভাস্কর,  রবিন পাল ও বিশ্বজিৎ পাল।

বছরের এ সময়ে শিল্পী বাসুদেব বিশ্বাসের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তৈরি করতে হয় প্রতিমা। সকাল থেকে রাত নিরন্তর চলে রং তুলির আঁচড়।

এবছর শ্রমিক ও কারিগরের অভাবের কথা জানালেন বাসুদেব।

“এবার উপযুক্ত শ্রমিক ও কারিগরের অভাবে মন ভোলানো প্রতিমা তৈরি সম্ভব হচ্ছে না,” বললেন বসুদেব।

ফাইল ছবি

বাসুদেব এবার শার্শার পান্তাপাড়া পূজা মণ্ডপে প্রতিমা তৈরি করছেন। এবার তিনি নিচ্ছেন ৩০ হাজার টাকা। জেলার ১০টি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ নিয়েছেন তিনি। সহকারী আছেন পাঁচ জন।

এই মৌসুমে তার প্রায় দুইলাখ টাকা আয় হবে বলে জানান তিনি।

বসুদেব বলেন, গত বছর তিনি ১৪টি প্রতিমা গড়লেও এ বছর  সে সংখ্যা কমিয়ে এনেছেন দশে। একইভাবে পার্শ্ববর্তী শিল্পী বাসুদেব ভাস্কর গতবারের পাঁচটির জায়গায় এবার তৈরি করছেন তিনটি প্রতিমা।

বাসুদেব ভাস্কর বলেন, “দক্ষ লোকের বড় অভাব। আজকাল আর এসব কাজ কেউ করতে চায় না। কারণ, অন্য কাজে এর চেয়ে অনেক বেশি উপার্জন করা যায়।”

বেনাপোলের প্রাচীন শিব মন্দিরে কাজ করছেন সাতক্ষীরার প্রতিমা শিল্পী বাসুদেব ভাস্কর।

তিনি আরও বলেন, “প্রায় ২৫ বছর ধরে প্রতিমা তৈরি করে আসছি। আমার বাবা-দাদাও প্রতিমা তৈরির কাজ করতেন। বছরের ১২ মাসই প্রতিমা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করি।

“দুর্গা পূজা এলে আমাদের কাজ বেড়ে যায়। এ সময় কর্মচারীদের বেতন দিয়েও আমাদের ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা আয় থাকে।”

প্রতিমা শিল্পী রবিন পাল বলেন, এখন মাটি মেখে জীবিকা উপার্জন করতে শিল্পীদের ঘরের ছেলেরাই আগ্রহী নয়। তাহলে অন্য পেশার মানুষ এখানে কেন আসবে?

“এ পেশায় শুধু এই একটি মৌসুম ছাড়া সারাবছর কোনো কাজ থাকে না। তখন কী করে দিন চলবে? সেই অনিশ্চয়তার কারণেই লোক কমে যাচ্ছে এ পেশায়। তাই, স্বাভাবিকভাবেই কমছে প্রতিমার সংখ্যাও।”

ফাইল ছবি

সাতক্ষীরার কলারোয়ার ভাস্কর রবিন পাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ছোট প্রতিমা তৈরিতে তারা পারিশ্রমিক নিচ্ছেন ১৬ হাজার টাকা। মাঝারি ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। বড়গুলি করছেন লাখ টাকায়।

“সাত জনের সংসার প্রতিমা তৈরি করেই চলে। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচও আসে এই আয় থেকে।”

শার্শার উলাশি সার্বজনীন পূজা মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কলারোয়ার গোয়ালচাতর গ্রামের ভাস্কর বিশ্বজিৎ পাল। তিন জন সহযোগীকে নিয়ে তিনি এ বছর ১০টি স্থানে প্রতিমা তৈরি করছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ছোট প্রতিমা তৈরিতে তারা পারিশ্রমিক নিচ্ছেন ১৬ হাজার টাকা। মাঝারি ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। বড়গুলি করছেন লাখ টাকায়।

“পাঁচজনের সংসার প্রতিমা তৈরি করেই চলে। এবছর সকল খরচ বাদ দিয়েও দুই লাখ টাকা আয় হবে।”

শার্শা উপজেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বৈদ্যনাথ দাস বলেন, পূজার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে।

সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের কর্মীদের সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

শার্শা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু বলেন, “দুর্গা পূজা উপলক্ষে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি চলছে। উৎসবের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার, আমরা তাই করব।”

শার্শা থানার ওসি মশিউর রহমান ও বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি অপূর্ব হাসান জানান, পূজার কেনাকাটা করতে আসা মানুষ ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা প্রদান এবং পূজার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে।

মন্ডপগুলোতে নিরাপত্তা দেওয়া ছাড়াও শহরে পুলিশের টহলের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। র‌্যার ও বিজিবির উপস্থিতিও থাকছে বলে জানান তারা।