বিয়ের সূত্রে ফেনীতে আশ্রয় ১৩ রোহিঙ্গার

আত্মীয়তার সূত্র ধরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১৩ সদস্যের এক রোহিঙ্গা পরিবার ফেনীর সোনাগাজীর একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

নাজমুল হক শামীম ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2017, 02:18 PM
Updated : 12 Sept 2017, 02:54 PM

গত রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) সোনাগাজীর চরদরবেশ ইউনিয়নের চরশাহাভিকারী গ্রামে মাতব্বর বাড়িতে আশ্রয় নেয় পরিবারটি।

চরদরবেশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ভুট্টু জানান, চরসাহাভিকারী গ্রামের মাতব্বর বাড়ির আব্দুর রশিদের মেয়ে শিউলি আক্তার চট্টগ্রামে একটি গার্মেন্টেসে চাকরির সুবাদে তার সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলমান জাফর আহম্মদের ছেলে মোহাম্মদ আনোয়রের বিয়ে হয় ২০১২ সালে।

“আনোয়ার ওই বছর মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে গার্মেন্টসে কাজ শুরু করেন।”

সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে আনোয়ারের স্বজনরা। ওই পরিবারের ১৩ সদস্য গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে  সোনাগাজীতে মাতব্বর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে বলে তিনি জানান। 

আশ্রয়গ্রহণকারীরা হলেন- আরাকান রাজ্যের তাংবাজার থানার বাইচি ধাং মরুর চাঙ্গেনা গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ জাফর আহাম্মদ, তার স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন, ছেলে মোহাম্মদ সফি, তার স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগম, তাদের সন্তান লাকি, মোহাম্মদ আলম, মোহাম্মদ রফিক, মোহাম্মদ ওমর ও মোহাম্মদ হাসান, আব্দুল হাইয়ের স্ত্রী খতিজা বেগম, তার ছেলে আজিজুল হক, আজিজুল হকের মেয়ে নুর হাসিনা ও আছিয়া বেগম।

১৩ সদস্যদের এই পরিবারের সাতজন শিশু, যাদের বয়স চার মাস থেকে নয় বছর।

পরিবারটির অভিভাবক মোহাম্মদ জাফর আহম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার যুবতী দুই মেয়েকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। আরেক মেয়ের কোনো খোঁজ জানেন না। তার বড় ছেলে মোহাম্মদ সফি সেখানে স্থানীয় মসজিদের ইমাম ছিলেন।

“বাড়ি-ঘর স্থানীয়রা জ্বালিয়ে দেওয়ার পর আরাকান রাজ্য থেকে জঙ্গল, নদী, পাহাড় অতিক্রম করে জীবন বাচাঁতে বাংলাদেশে এসেছি। শিশুদেরকে কোলে করে টানা ১৪ দিন হাঁটতে হয়। এ সময়ে শুধু পানি খেয়ে জীবন বাঁচাতে হয়েছে।”

তার পরিবারের ১৩ সদস্যের সবাই কমবেশি অসুস্থ। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জ্বরসহ তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বলেও তিনি জানান।

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান, রোহিঙ্গা পরিবারটির আশ্রয়ের খবর পেয়ে পুলিশ মাতব্বর বাড়িতে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে অবগত করেছেন।

সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মিনহাজুর রহমান বলেন, “আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গা পরিবারটির প্রতি মানবিক দিক বিবেচনা করা হয়েছে। তবে তারা যেন অন্য কোথাও চলে যেতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসনকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।”

মিয়ানমারের রাখাইনের কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়ি এবং একটি সেনা ক্যাম্পে গত ২৪ অগাস্ট রাতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেখানে নতুন করে সেনা অভিযান শুরু হয়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তে শুরু হয় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্রোত। 

এ পর্যন্ত পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা তিন লাখ ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করছেন জাতিসংঘ কর্মকর্তারা।