নীলফামারীতে ইউপি কার্যালয় থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৮

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার এক ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে; যাকে সেখানে আটকে রাখায় আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2017, 01:24 PM
Updated : 6 Sept 2017, 01:24 PM

বুধবার উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের দ্বিতল ভবনের একটি কক্ষ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয় বলে জানান কিশোরগঞ্জ থানার ওসি বজলুর রশীদ।

নিহত আল আমিন বাদশা (৩৫) উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়ভিটা গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে।

এ ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে নয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করলে পুলিশ এক ইউপি সদস্য, দুই গ্রাম পুলিশসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।

এরা হলেন, মাগুড়া ইউনিয় পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দুলু মিয়া (৪১), সংরক্ষিত নারী সদস্য আঞ্জুয়ারা বেগমের স্বামী মো. চাঁদ মিয়া (৪৫), গ্রাম পুলিশ আব্দুল লতিফ (৩৩), হামিদুল ইসলাম (৩২), আল আমিনের শ্যালক একই ইউনিয়নের সিংগেরগাড়ি গ্রামের রোকন মিয়া (৩০), নিশাদ আলী (২৮), রুবেল মিয়া (২৫), ও মো. রিপন (২৪)।

আরেক আসামি শাহাবুল ইসলাম (৪০) পলাতক রয়েছেন।

আজিজুল ইসলাম জানান,  তিন বছর আগে মাগুড়া ইউনিয়নের উত্তর সিঙ্গেরগাড়ি গ্রামের মৃত রুহুল আমিনের মেয়ে রোজিনা বেগমের (২৬) সঙ্গে বিয়ে হয় আল আমিন বাদশার। তাদের দুই বছরের একটি মেয়ে আছে।

“মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাদশা তার স্ত্রী সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে শ্বশুর বাড়িতে গেলে সেখানে পারিবারিক বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ঝগড়াঝাটি হয়। এর জেরে ছেলের শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে আটকে রেখে মেম্বার-চেয়ারম্যানকে খবর দেয়।”

তিনি বলেন, “এরপর শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সহযোগিতায় ইউপি সদস্য আমার ছেলেকে মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে এনে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন এবং বিচারের নামে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখেন।

“সেখানে বন্দিদশায় সামাজিক মানসম্মান ক্ষুন্নের কারণে আমার ছেলে তার পরনের শার্ট গলায় পেচিয়ে জানালার গ্রিলের সঙ্গে আত্মহত্যা করে।”

আল আমিনের শ্যালক রোকন বলেন, “আল আমিন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছোরা হাতে তাদের বাড়িতে আসে। পরিবারের (শ্বশুর বাড়ির) সদস্যদের খুনের হুমকি দিলে তাকে আটক করে মেম্বার চেয়ারম্যানকে খবর দিলে তারা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে আটকে রাখে।”

এ বিষয়ে মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহমুদুল হোসেন সিহাব মিয়া বলেন, “রাত আড়াইটার দিকে তারা আল আমিনকে ইউনিয়ন পরিষদে এনে আমাকে ফোন দেয়। তখন আমি একটি সালিশ বৈঠকে ছিলাম। আমি তাদের বলি গ্রাম পুলিশের হেফাজতে তাকে (আল আমিন) রাখতে।

“সেখানে দুই গ্রাম পুলিশ ও মেয়ের দুই ভাইয়ের জিম্মায় তাকে আটকে রাখা হয়। পরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে আমাকে ফোন দিয়ে জানানো হয় ছেলেটি আত্মহত্যা করেছে, আমি তখনও সালিশ বৈঠকে ছিলাম।”

ওসি বজলুর বলেন, “মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে শ্বশুর বাড়িতে আল আমিনকে আটকিয়ে রাখার খবর পেয়ে তাকে উদ্ধারের জন্য পুলিশ পাঠাই। এরপর তার কোনো খবর না পেয়ে পুলিশ ফিরে আসে।

“বুধবার ভোর পৌনে ৪টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান আল আমিনের আত্মহত্যার খবর জানান।”