রূপার চাচাত ভাই এনজিওকর্মী গোলাম মোস্তফা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা অনেক চেষ্টা করেও কাউকে কিছু খাওয়াতে পারেনি।
“পরিবারের অনেকের চোখে ঘুমও নেই। রূপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েও ঘুমাতে পারছেন না। রূপার এমন মৃত্যু তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।”
গত এক সপ্তাহ ধরে শোকাহত পরিবারটির সবাই অনেকটা অভুক্ত রয়েছেন। পরিবারের সবাই এখন অনেকটা অসুস্থ।
ঈদের দিনও সবাইকে ডাক্তার দেখাতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন মোস্তফা।
রূপার ছোট ভাই উজ্জ্বল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বড় ভাই ঈদের নামাজ পড়তে গিয়েছিল। আমি যেতে পারিনি। মা খুবই অসুস্থ। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। বাড়িতে রান্না হয়নি, চাচারা খাবার পাঠিয়েছে। কেউ খায়নি।”
রোজার সময় ঢাকায় ফুফুবাড়িতে রূপার সঙ্গে তার শেষ দেখা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “শেষ যখন বোনের কফিন বাড়িতে আসল তখন তার মখুটাও বাড়ির কেউ দেখতে পারেনি। আল্লাহপাকের কাছে শুধু বলি, কাউকে যেন এমন কষ্ট না দেন। তাড়াতাড়ি বিচার হলেই বোনের আত্মা শান্তি পাবে।”
ছোঁয়া পরিবহনের একটি বাসে করে গত ২৫ অগাস্ট রাতে সিরাজগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে বাসের কর্মচারীরা রূপাকে পালাক্রমে ধর্ষণের পর ঘাড় মটকে হত্যা করে রাস্তার পাশে লাশ ফেলে যায়।
টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের পাশে মধুপুর উপজেলার পঁচিশ মাইল এলাকায় তার লাশ পাওয়ার পর হত্যার আলামত থাকায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে মধুপুর পুলিশ।
পরিচয় জানতে না পারায় ময়নাতদন্ত শেষে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে তাকে দাফন করা হয়।
গণমাধ্যমে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে মধুপুর থানায় গিয়ে ছবি দেখে রূপাকে শনাক্ত করে তার পরিবার। পরে রূপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান ছোঁয়া পরিবহনের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনায় ওই বাসের চালক, সুপারভাইজার, সহকারীসহ পাঁচজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তারা সবাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
খুন হওয়ার ছয় দিন পর কবর থেকে রূপার লাশ তুলে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ি গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে পুনরায় দাফন করা হয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়।
রূপা ঢাকার আইডিয়াল ল কলেজে পড়ালেখার পাশাপাশি একটি কোম্পানির প্রোমশনাল ডিভিশনে কাজ করছিলেন। তার কর্মস্থল ছিল ময়মনসিংহ জেলা সদরে।