‘ভাঙা ঘরে ঈদ নেই’

লালমনিরহাটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এবারের ঈদের আমেজ নেই; আছে শুধু সব হারানের বেদনা আর হাহাকার।

লালমনিরহাট প্রতিনিধিআনিছুর রহমান লাডলাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2017, 05:59 AM
Updated : 1 Sept 2017, 05:59 AM

বন্যায় নিন্মবিত্তের লোকজন যেমন সব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে তেমনি অনেক সম্পন্ন পরিবারও দিশেহারা।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাটের বুমকা এলাকার রহিমা বেওয়া (৮০)। সংসারে অভাব ছিল না। প্রতি বছর ঈদুল আজহায় বাড়িতে গরু কোরবানিও দিতেন।কিন্তু বন্যায় সব হারিয়ে এখন তারা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।

তিনি বলেন, এ বছর পশু কোরবানি দেওয়া হবে না। ঈদের দিন কী খাবেন তারও কোনো ব্যবস্থা নেই।

একই কথা বলেন হাতীবান্ধা উপজেলার মধ্য গড্ডিমারী এলাকার আঞ্জুয়ারা বেগম।

তিনি বলেন, স্বামী আর তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে বেশ ভালোই দিন চলছিল। হঠাৎ বন্যা এসে তাদের সাজানো-গোছানো সংসার তছনছ করে দিয়েছে, বাড়ি-ঘর ভেঙে গেছে।

ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন জানিয়ে আঞ্জুয়ারা বলেন, “এবার আমাদের ঈদ মাটি হয়ে গেছে।”

উপজেলার তালেব মোড় এলাকার ষাটোর্ধ্ব জরিনা বেওয়া বলেন,  “বন্যায় আমাদের ঘর-বাড়ি ভেঙে গেছে। এখনও মাটিতেই পড়ে আছে সেই ঘর। ত্রাণের যে চাল পাই- তা দিয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছি। তাই আমাদের ভাঙা ঘরে ঈদ নেই বাবা।”

বুমকা গ্রামের নবম শ্রেণির শির্ক্ষাথী ফরিদা আক্তার বলেন, প্রতি বছর ঈদে নতুন জামা-কাপড় পেলেও এ বছর জামা-কাপড় তো দূরের কথা ঈদের দিন ভাত খেতে পারবেন কি না জানেন না।

জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন অফিস  জানায়, গত ১৩ অগাস্ট দ্বিতীয় দফায় বন্যায় তিস্তা-ধরলা আর সানিয়াজান নদীর পানিতে সবকিছু ভেসে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন লালমনিরহাটের অসংখ্য পরিবার। এরমধ্যে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা, সদর ও আদিতমারী উপজেলায় সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে।

সরকারি হিসেবে দ্বিতীয় দফা বন্যায় জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নে অন্তত সাড়ে চার লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বন্যায় সাত হাজার ৭০২ টি পুকুরের এক হাজার ১৭৪ মেট্রিকটন মাছ ভেসে প্রায় ১১ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে যায় ৩১ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. শফিউল আরিফ জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে খাদ্য শস্য বিতরণ অব্যাহত আছে। ঈদ উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে ভিজিএফ চাল বিতরণ করা হয়েছে।